নারী ফুটবলে বাংলাদেশের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। জাতীয় ও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে আফঈদা খন্দকাররা জয়গান গেয়েই চলেছেন। মিয়ানমার জয় করে নারী জাতীয় দল প্রথমবার এশিয়ান কাপে মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। এখন আবার অনূর্ধ্ব-২০ দলও স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি। আজই হতে পারে সাগরিকা, মুনকী, তৃষ্ণাদের উৎসবের দিন। লাওসে অনুষ্ঠিত আসরে ‘এইচ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে। নিউ লাওস স্টেডিয়ামে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ৩টায়। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া বলেই সন্দেহ রয়েছে জয়যাত্রা ধরে রাখা যাবে কি না। ফিফা র্যাঙ্কিং ও মান সবদিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে কোরিয়ার মেয়েরা। যে দেশের মেয়েরা নিয়মিত বিশ্বকাপ খেলে তাদের সঙ্গে লড়বে আফঈদা খন্দকারের দলটি। পুরুষ টুর্নামেন্ট হলে চোখ বন্ধ করে বলা যেত বাংলাদেশ হারবে। খেলাটা যখন বাংলার মেয়েদের তখন প্রত্যাশা থাকবে শুধু জয়ই।
এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে আফঈদারা আজই ইতিহাস লিখে ফেলতে পারেন। যেমনটি করেছেন জাতীয় দলের বেলায়। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি অলিখিত ফাইনালে পরিণত হলেও ম্যাচ যদি ড্র হয় তার পরও চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিতে পারবে বাংলাদেশের মেয়েরা। কেননা, দুই ম্যাচ খেলে দুই দেশের পয়েন্ট যেমন সমান ৬। তেমনি গোল ব্যবধান সমান সমান ১০। বাংলাদেশ ১১ গোল দিয়ে এক গোল হজম করেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ১০ গোল দিয়ে হজম করেনি একটাও। তাতে কী, বাংলাদেশ তো এক গোল বেশি দিয়েছে। তাই ম্যাচ যে ব্যবধানেই ড্র হোক না কেন, বেশি গোল করার সুবাদে থাইল্যান্ডের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়ে যাবে বাংলাদেশ। শুধু কি তাই, কোরিয়ার কাছে হারলেও বাংলাদেশের দুয়ার উন্মুক্ত থাকবে। তবে হারের ব্যবধানটা কম হলেই চলবে।
এত পথ খোলা, বাংলাদেশের মেয়েরা পারবেন কি ফুটবলে আরেকটি ইতিহাস লিখতে। জিতলে তো কোনো সমীকরণের প্রয়োজন পড়বে না। ড্র করলেও চূড়ান্ত পর্বে। আবার কম ব্যবধানে হারলেও রাস্তা ক্লিয়ার। এমন সুবর্ণ সুযোগ কি কাজে লাগাতে পারবে না? বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস তো তুঙ্গে। আফঈদারা জিতেই থাইল্যান্ডে উড়তে চান। সাফ ছাড়িয়ে মেয়েরা এখন এশিয়ান ফুটবলেও দুর্দান্ত খেলছেন। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক লাওসকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে। পূর্ব তিমুরকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম ম্যাচে পূর্ব তিমুরকে ৯-০ গোলে হারালেও পরের ম্যাচে লাওসের বিপক্ষে ঘাম ঝড়ানো জয় পেয়েছে এক গোলে।
দক্ষিণ কোরিয়া নিঃসন্দেহে শক্তিশালী দল। তাই তো যত চিন্তা। কিন্তু মেয়েরা তো সব ভয়কে জয় করে চলেছেন। সেখানে কম গোল খাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে তাা ভাবাটা হবে সাগরিকা, তৃষ্ণাদের অপমান করা।
নারী ফুটবলাররা কতটা অপ্রিরোধ্য তা বারবার প্রমাণ করছেন। সেখানে কোন যুক্তিতে কোরিয়াকে ভয় পাবে? হেড কোচ পিটার বাটলার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়াকে সম্মান জানিয়ে বলেছেন, ‘ওরা নিসন্দেহে শক্তিশালী। কোরিয়ানরা ফুটবলকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশই বা কম কীসে। মেয়েরা দুর্দান্ত খেলছেন। সত্যি বলতে কী, ম্যাচটি কৌশলের। নানা দিক দিয়েই আমাদের পথ খোলা রয়েছে, তার পরও চিন্তা একটাই,০ শুধুই জয়।’
আফঈদা খন্দকার নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়ায় বাংলাদেশ জ্বলে উঠছে নতুন রূপে। জাতীয় দল মিয়ানমার জয়ে এশিয়ান কাপে অস্ট্রেলিয়ার টিকিট পেয়েছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টেও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আজ কি অধিনায়ক হিসেবে আফঈদা হ্যাট্রিক শিরোপার রেকর্ড গড়বেন? তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো খেলছি। যার যার পজিশনে সেরাটাই দিচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্যই শক্তিশালী। তাদের হারানোটা হবে গৌরবের। সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করব জয়ের ধারা ধরে রাখতে।’
আগামী বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি-২০ চূড়ান্ত পর্ব। স্বাগতিক হিসেবে থাইল্যান্ড সরাসরি খেলবে। এরপর বাছাই পর্বের আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা সুযোগ পাবে। তার পর বেস্ট রানার্স আপ হিসেবে আরও তিন দল চূড়ান্ত পর্বে সুযোগ পাবে। থাইল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে না হারলেই বাংলাদেশেরও সুযোগ থাকবে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়?