‘বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার মহান অধিপতি, তোমার শেষ উপদেশ আমি ভুলিনি জনাব। তুমি বলেছিলে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের প্রশ্রয় দিয়ো না, তুমি বলেছিলে সুযোগ পেলেই তারা এ দেশ কেড়ে নেবে, আমি তাদের প্রশ্রয় দেব না’—গলা কাঁপানো এমন সংলাপ কানে আসতেই ভেসে উঠে আনোয়ার হোসেনের মুখচ্ছবি। তাকে বলা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের 'মুকুটবিহীন নবাব'।
খান আতাউর রহমানের ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিটিতে নাম ভূমিকায় দাপুটে অভিনয় সুবাদে তিনি পরিণত হয়েছিলেন কিংবদন্তিতে। আর এ ছবির আগে ও পরে অসংখ্য ছবিতে নানামুখী চরিত্রে তার অভিনয় সমৃদ্ধ করেছে বাংলা চলচ্চিত্রকে।
আজ (১৩ সেপ্টেম্বর) এ কিংবদন্তির ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে না ফেরার দেশে চলেন যান তিনি। তাকে রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আজকের এ দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এছাড়া তার পরিবার থেকে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
আনোয়ার হোসেনের জন্ম জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে ১৯৩১ সালের ৬ই নভেম্বর। তার পিতা নাজির হোসেন ছিলেন জামালপুরের সাব-রেজিস্ট্রার। শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের বেশ ক’বছর কেটেছে তার জামালপুরে। মূলত স্কুলজীবন থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। স্কুল জীবনে প্রথম অভিনয় করেন আসকার ইবনে সাইকের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে। এরপর বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। ১৯৫১ সালে জামালপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি।
১৯৫৮ সালে ‘তোমার আমার’ সিনেমার মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ৫২ বছরের অভিনয় জীবনে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা।
নায়ক হিসেবে আনোয়ার হোসেনের শেষ সিনেমা ‘সূর্য সংগ্রাম’। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি। ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পান তিনি।
আনোয়ার হোসেন অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো— ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘বন্ধন’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ’, ‘রংবাজ’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘রুপালী সৈকতে’, ‘নয়নমণি’, ‘নাগর দোলা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সূর্য সংগ্রাম’, ‘সূর্যস্নান’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জোয়ার এলো’, ‘নাচঘর’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘পালঙ্ক’, ‘অপরাজেয়’, ‘পরশমণি’, ‘শহীদ তিতুমীর’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’ প্রভৃতি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন