১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৩:৪৪

প্রেম নয়, আমরা এখন চুমু চাই

শওগাত আলী সাগর

প্রেম নয়, আমরা এখন চুমু চাই

প্রেম নয়, আমরা এখন চুমু চাই। ভালোবাসায় এখন আর পোষায় না। আমরা ভালোবাসা দিয়ে সংগ্রামকে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছি, পেরেছিওতো। জাতির ঘাড়ে চেপে বসা স্বৈরাচারকে হটাতে বুকের রক্ত ঢেলে দিতেও তো প্রেম লাগে, সেই প্রেম কাদের ছিলো- তাদের নাম এখন আর মনে রাখাটা নিরাপদও তো নয়। কবে কোনকালে এইদেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়েছিলো- সেগুলো এখন মনে রেখে লাভ কি? (যেমন কেউ কেউ বলে- সেই কবে ৭১ এ কি সব হয়েছে সেগুলো এখন আর মনে রেখে লাভ কি?)

তার চেয়ে আমরা বরং প্রেমে, ভালোবাসায় মেতে থাকি। ভালোবাসা সত্যিইতি আমাদের দ্রোহকে ভুলিয়ে দিয়েছে, আমাদের প্রেমিক সেলিম-জাফর- জয়নাল দীপালী সাহাদের ভুলিয়ে দিয়েছে। ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’- বলে আমরা এখন আর নতুন প্রেমের শপথ নেই না, আমরা হ্যাপি ভ্যালেনটাইন বলে ভালোবাসার নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকি। 

এই বুঁদ হয়ে থাকাটাও আজকাল কারা যেন খোঁচা মেরে ভেঙ্গে দিতে চায়। প্রেম না দ্রোহ- এমন একটা বিতর্ক উসকে দেওয়ার চেষ্টাও দেখা যায়। সেটি তো আর হতে দেওয়া যায় না। প্রেমে যদি ভুলিয়ে রাখা না যায়, তা হলে চুমুতে ভুলিয়ে দাও। 

আমরা এখন চুমু নিয়ে চুমোচুমি করবো, প্রকাশে মাতামাতি করবো। সেই মাতামাতিতে প্রেম আর দ্রোহের বিতর্ক উসকে দেওয়ার চেষ্টাটাও চাপা পড়ে যাবে। চুমুর আলাদা একটা আকর্ষন আছে। আমার নিজেরও চুমু খুবই প্রিয়। যেমন প্রিয় ঢাকার বার্তা সম্পাদকদেরও। তারা ফেসবুক থেকে চুমুটাই বেছে নিয়েছেন, দ্রোহ উদযাপনের আকাঙ্ক্ষা নয়।

১৪ ফেব্রুয়ারিতে আর ভালোবাসা দিবস নয়, সেটি এখন সেকেলে শোনায়। সেলিম দেলোয়ার দিবস তো নয়ই। ওই সব দ্রোহ- দেশপ্রেমের উপখ্যান এখন নিতান্তই অচল মাল। দেশে যখন সামরিক শাসন থাকে, তখন মিডিয়ায় ফুল পাখি, প্রেম প্রীতির ছড়াছড়ি থাকে। কবিরা তখন দেশের মধ্যে নয়, আকাশের তারায় প্রিয়ার মুখ খুজেঁন। আমরা এখন চুমো নিয়ে মাতামাতি করবো। 

এখনো আমরা চুমোচুমিতে ডুবে থাকবো। গোপনে নয়- প্রকাশ্যে চুমু খাবো,সেই চুমো খাওয়াকে ‘সংস্কার’ আধুনিকতা ইত্যাদি নানা অভিধায় বর্ণময় করে তুলবে মিডিয়ার চুমুকাতর বার্তা সম্পাদকগন। 

১৪ ফ্রেব্রুয়ারিতে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে চুমু খেতে গিয়ে কেউ কেউ হয়তো থমকেও দাঁড়াবেন। প্রেমিকার লাল লিপিস্টিকে কেউ হয়তো সেলিম কিংবা দেলায়ারের হুদপিণ্ড থেকে ছিটকে পড়া ফোঁটা ফোঁটা রক্ত দেখতে পাবেন। নিকোটিনে পোড়া প্রেমিকের ঠোঁটে নিজের ঠোট চেপে ধরতে গিয়ে কোনো কোনো প্রেমিকার হয়তো মনে হতেও পারে- কালচে হয়ে পড়া কোনো রক্তপিণ্ড নয়তো!
সত্যিই আমরা ভিন্ন একটা সময় পাড় করছি এখন। ভালোবাসাবাসিতে সেলিম-জাফরের মতো প্রেমিকদের নামই আমরা ভূলিয়ে দিতে পেরেছি। এখন চুমোচুমিতে ‘একদা দ্রোহের গল্পকাহিনী’কে উসকে দেওয়ার চেষ্টাটাও ভুলিয়ে দেবো।

(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত) 


বিডি-প্রতিদিন/ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর