১৭ মে, ২০২০ ১০:৩৪

করোনা কালের অযাচিত ভাবনা

শামীম আজাদ


করোনা কালের অযাচিত ভাবনা

আমি কবি। থাকি বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে এক ভিন্ন ভাষাধারী জীবনখনিতে। কাব্যকর্ম ও লেখালেখিই আমার জীবিকা হলেও আজও একক কোন ইংরাজি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। এ ভেবে মন খারাপ লাগে। কিন্তু বিস্তর হয়েছে বাংলায়। নানান ইংরেজি সংকলন বা দ্বৈত প্রকাশনার যা কিছু প্রকাশিত হয় বা হয়েছে তা দিয়েই সুগৃহিনীর মত রিসাইকেল করে সঙ্গে মঞ্চ-পরিবেশনার নানান ছলা কলা রপ্ত করে টিকে গেছি। বলা যায় তা সেন্স অব সার্ভাইবাল থেকেই করা।

শিল্পাঙ্গনের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বুঝি আমার কবিতা ইংরেজির জন্য নয় - আদৃত হয় বা হচ্ছে অন্য কারণে। আর সে হচ্ছে আমার কাব্য বিষয় ও বিনোদনে বাংলাদেশের সুগন্ধ ও স্বাদ এর কারণেই। আমি কবিতার সঙ্গে গল্প বলি, যাকে স্টোরি টেলিং বলে আরকি। বলতে দ্বিধা নেই আমার ইংরেজি আমার বাংলার সমকক্ষ নয় - কোনদিন হবে বলে মনেও করি না। আমার পরের প্রজন্মের সে বালাই নেই। কিন্তু তাদের আবার বাংলাটা আমার ইংরেজির সমমানের তো নয়ই বরং বেশ নিচে। কিন্তু তাতে কোন বাধা নেই যতক্ষণ ভিনভাষায়ই তাদের ‘বাংলা’ উপলব্ধির কথা লিখতে পারছে। ঝুম্পা লাহিড়ী বা জিয়া হায়দারের মত।

এতদিনে অবেলায় বুঝি এ অক্লান্ত চলার সুফল দেশে না হলেও এদেশে আসতে শুরু করেছে। যারা আমার পোস্ট ফলো করেন তারা জানেন কত সব অসম্ভব স্বপ্নতুল্য স্থানে বাংলাদেশের সবুজ নিয়ে- বিলেতের বাতি নিয়ে দাঁড়াচ্ছি এদেশের কবিদের সঙ্গে।

ভাবতে বেশ লাগে, ব্রিটিশ লাইব্রেরি আমার সাক্ষাৎকার ও কবিতা আর্কাইভ করেছে, গুগল সার্চ দিলে বা এ্যালেক্সাকে জিজ্ঞেস করলে ব্রিটেনে বাংলাদেশি বাইলিংগুয়াল কবি হিসেবে শীর্ষেই আসে আমার নাম। গত বছর এথেন্সের এ পোয়েটস আগোরা’র আবাসিক কবির মর্যাদা অর্জন করেছি। আগামী বছর রুমানিয়া যাচ্ছি আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলনে।

এ যাবত যা পেয়েছি তা কঠোর শিল্প সাধনায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পেয়েছি। শিক্ষক ও প্রশিক্ষক পেয়েছি প্রখ্যাত ও প্রিয় মাইকেল রোজেন, বেঞ্জামিন জাফানায়া, ওয়েন্ডি কোপ ও জন হোগলির মত কবিগন।

জ্ঞানের মতই সাহিত্যের জগতেও কোন শর্টকাট রাস্তা নেই। তবু একখানা উপন্যাস লিখে নিমেষে যে অর্জন সম্ভব একখানা কবিতায় হয় না। কয়েক খানায় ও না। সে জন্য পূর্ণাঙ্গ একখানা কাব্য গ্রন্থ হতে হয়। এবং তা যেন তেন নয়, তা হতে হয় বাছাই বা নির্বাচিত কবিতায় পরিপূর্ণ। আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে বাংলাদেশে কবি হিসেবে একটি অবস্থান অর্জিত হলেও, পঞ্চাশ বছর ধরে কবিতা লিখলেও বাংলা ভাষায় ও আমার তা নেই।

ত্রিশ বছর ধরে অনেক বার একটি প্রশ্ন শুনতে হয়েছে, আমি কেন দেশে থাকলাম না, থাকলে আজ আমি ঐ ঐখানে থাকতাম। অমুক লেখক তমুক লেখক এদের চাইতে ছোটতো না আমি। দেশের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি পুরস্কার তো পেতে পারতাম। তখন আমার নিরোদ সি চৌধুরীর কথা মনে পড়ে।

"আমার বাঙালি জীবন অবস্থা চক্রে বিদেশে- নির্বাসনেও বলা চলে শেষ হইতে চলিয়াছে। কিন্তু সেটাও আমার জীবনে ব্যর্থতা না আনিয়া সার্থকতাই আনিয়াছে। বিলাতে বাস করিয়া আমি যে ভাবে কাজ করিতে পারিতেছি (আমার ক্ষেত্রে যা যা করিতেছি) দেশে থাকিলে তাহা কখনই সম্ভব হইত না। ইহাই যদি যথেষ্ট না হয় আমি এটাও বলিতে পারি যে, বেশি-ই পাইয়াছি। ... তারপর খ্যাতি বা সমাদর লাভ ও কম হয় নাই।... অবশ্য আমি একথা কখনই বলিব না যে, আমি আমার দেশবাসীর কাছ সমাদর পাই নাই, কিন্তু তাহা গোপনে অপ্রকাশিতভাবে। বিদেশে সে বিষয়ে আমার অনুমানের শরণ নিতে হয় নাই। "

তবে দেশে যে অবস্থান আছে তা প্রিয় পাঠক আপনাদেরই দান। আপনারাই আমার পাথেয়!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর