২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৮:৫৬

আপনার ঢালাও মন্তব্যে ভালো লোক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়

কাজী ওয়াজেদ আলী

আপনার ঢালাও মন্তব্যে ভালো লোক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়

কাজী ওয়াজেদ আলী

সেদিন কয়েকজন একসাথে গল্প করছিলাম। খুব ভালো জানা একজন ভদ্রলোক সম্পর্কে প্রশংসা করতেই পাশ থেকে একজন বলে উঠল, ‌‘উনি কিন্তু কঠিন একটা মাল’। অর্থাৎ নেতিবাচক অর্থে ভদ্রলোককে মূল্যায়ন করা হলো।

বললাম-ওনার সাথে কাজ করেছেন?
বললো-না,
বললাম-তাহলে উনি যে একটা ‘মাল’ এটা বুঝলেন বা জানলেন ক্যামনে?
বললো- শুনেছি,
এরপর ভদ্রলোক সম্পর্কে জানামতে অসত্য কিছু ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে পচানোর চেষ্টা করলেন।
আমি ভদ্রলোকের সাথে সরাসরি কাজ করেছি। তাই বলা কথাগুলোর সাথে ওনাকে মোটেও মেলাতে পারছিলাম না। বুঝলাম হয়তো যোগ্যতাজনিত কারণে ভালো জায়গায় কাজ করায় পেশাগত জেলাছি থেকে এমন কিছু মন্তব্য করা হলো।

এই কথাগুলো অবশ্য আমরা প্রায় সবাই কমবেশি বলে থাকি। একসাথে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য বা কাজ না করেও মানুষ সম্পর্কে বলি- 
ওহ্ লোকটা একটা ‘জিনিস’,  
সে কিন্তু একটা কঠিন ‘পিস’, 
ব্যাটা একটা দারুণ ‘চিজ’, 
অমুক কিন্তু একটা কঠিন ‘যন্ত্র’, 
আর যাইহোক লোকটা কিন্তু একটা ‘কঠিন মাল’ বটে,
অমুক কিন্তু একটা ‘ভ্যাটার্ন’ মাইরি, 
ইত্যাদি ইত্যাদি। জিনিস, পিস, চিজ, যন্ত্র, মাল ও  ভ্যাটার্ন এসব শব্দের আভিধানিক অর্থ যাই হোক না কেন আমরা প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক অর্থাৎ খারাপ লোক বোঝাতেই শব্দগুলো ব্যবহার করি।

কারো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে এ ধরনের মন্তব্য মুখে বলতে বলতে সে লোকটা একসময় অনেকের কাছে খলনায়কে পরিণত হয়। না জানা বা একসঙ্গে কাজ না করেও অনেকের বলার কারণে ভদ্রলোক সবার কাছে অহেতুক খারাপ মানুষে পরিণত হয়। তখন আগে থেকে নেতিবাচক ধারণাগত কারণে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে ভদ্রলোকের প্রতি প্রভাব পড়ে, ফলে ভদ্রলোক অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির সম্মুখীন হন।

অনেক সময় সমাজের দায়িত্বশীল এবং পদস্থ ব্যক্তিদের এমন ধারণাগত কারণে তারা মানুষ সম্পর্কে ভুল ভেবে বসেন। ফলে পেশাগত এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কাজেই কারো সম্পর্কে ঢালাওভাবে নেতিবাচক মন্তব্যের সময় আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

আমরা ব্যক্তিগতভাবে জেনেশুনে মন্তব্য করছি, নাকি শুধু শুনে শুনেই এমন ধারণা করছি, তা বোঝা উচিত। তাছাড়া ধর্মীয় বিধানমতে কারণ অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে গীবত গাওয়া চরম গর্হিত কাজ। কাউকে ‘মাল’ সূচক আপনার ঢালাও মন্তব্যে প্রকৃতপক্ষে কোনো ভালো লোক অহেতুক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত। কারণ, কথিত ‘মাল’ না হয়েও ভালোমতো না জেনে যদি কাউকে অহেতুক মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ‘মাল’ বা ‘জিনিস’ বানানোর চেষ্টা করা হয়। তবে সৃষ্টিকর্তার প্রাকৃতিক নিয়মচক্রে পড়ে নিজেও হয়তো কখনো কারো কাছে কথিত ‘ভ্যাটার্ন মাল’ হয়ে যেতে পারি। ইহা একান্তই নিজস্ব মতামত।

লেখক : পুলিশ কর্মকর্তা।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর