২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:৫৮

নজর কাড়ছে দৃষ্টিনন্দন ‌‘বোতল বাড়ি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

নজর কাড়ছে দৃষ্টিনন্দন ‌‘বোতল বাড়ি’

প্লাস্টিকের খালি বোতলের মধ্যে বালু ভরে বাড়ি নির্মাণ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার একজন দন্ত চিকিৎসক। ইউটিউবে জাপানের প্রযুক্তি দেখে প্লাস্টিকের বাড়ি নির্মাণের কাজে হাত দেন তিনি। চারিদিকের দেয়াল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর এখন সেই বাড়ির ছাদ নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। 

বোতল, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করে নির্মাণাধীন এই বাড়ি ভূমিকম্প সহনীয় ও বুলেটপ্রুভ হবে বলে জানিয়েছেন বাড়ির মালিক পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ। 

আলোচিত বাড়িটি নির্মিত হচ্ছে আগৈলঝাড়া উপজেলার রামানন্দেরআক গ্রামে। 

স্থানীয় বাসিন্দা রনজিত মিস্ত্রি জানান, প্রথম দিকে পলাশের বোতল বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেয়নি প্রতিবেশীরা। পরে দেখেন পলাশ ট্রাকে করে প্লাস্টিকের খালি বোতল আনছেন বাড়িতে। পরে সেই বোতলে বালু ভরেন তিনি। 

পলাশের প্রতিবেশী স্বপন কুমার জানান, প্রথমে বিষয়টি ভ্রুক্ষেপ না করলেও যখন অবকাঠামোটি ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যায় তখন গ্রামবাসী বিস্মিত হয়। বোতল বাড়িটি দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে। নির্মাণাধীন বোতল বাড়ি নিয়ে আশাপাশের হাটবাজারেও আলোচনা হচ্ছে বলে তিনি জানান। 

পলাশের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জ্যোতিষ চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, ইন্টারনেটে জাপানি প্রযুক্তির বোতল বাড়ি দেখে বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর কথা চিন্তা আসে পলাশের মাথায়। প্রথমে তাকে নিষেধ করেছিলেন। পরে তার অনুরোধে বাড়ি বানানোর অনুমতি দেয় পরিবার। এই পর্যায়ে এসে দেখা যায় বাড়িটি ভালোই হচ্ছে। 

পলাশের স্ত্রী জুঁই রানী দাস বলেন, আশপাশের মানুষ প্রতিদিন নির্মাণাধীন বোতল বাড়ি দেখতে আসছেন। তাদের প্রসংশা শুনে ভালো লাগে। 

অভিনব পদ্ধতিতে বাড়ি নির্মাণের সাথে জড়িত থাকতে পেরে ব্যাপক খুশি রাজমিস্ত্রী ও শ্রমিকরা। 

বাড়ি নির্মাণের কাজে সম্পৃক্ত নির্মান শ্রমিকরা জানান, বাড়িটি নির্মাণে ইটের বদলে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল আর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভরে তা ব্যবহার করা হয়েছে দেয়াল গাঁথুনীতে। বাড়ির পাশের পুকুরের ঘাটলাও নির্মাণ করা হয়েছে বোতল দিয়ে।

ওই বাড়ি নির্মাণরত নির্মাণ শ্রমিক মতি সিকদার বলেন, গত ১০ বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন তিনি। বোতল দিয়ে বাড়ি বানানো এটাই তার জীবনের প্রথম কাজ। বাড়ির নির্মাণ কাজ খুবই মজবুত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ির ক্ষতি হবে না। দুর্গা পূজার পর বাড়ির ছাদ ঢালাই হবে বলে তিনি জানান। 

বোতল বাড়ির উদ্যোক্তা পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের প্রযুক্তি জাপানের। বাড়ির প্রতিটি দেয়াল শীতে গরম আর গরমে ঠান্ডা থাকবে। বাড়ির ভেতরটাও আবহাওয়া অনুযায়ী বসবাসের উপযোগী হবে। প্লাস্টিকের বোতলগুলো ফ্ল্যাক্সিবল হওয়ায় এটা ভূমিকম্প সহনীয় হবে। দেয়াল হবে বুলেট প্রুভ। 

তিনি আরও বলেন, ১৫ শ’ ২৫ স্কয়ার ফিট আয়তনের বাড়ির মাটির নিচে ফাউন্ডেশনের কাজে এক লিটারের বালুভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। মাটির উপরের দেয়ালগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে আড়াই শ’ মিলিলিটারের বিভিন্ন কোমলপানীয়ের বালুভর্তি প্লাস্টিকের বোতল। বাড়ি নির্মাণে ৪৮ মণ (৭৫ হাজার পিস) প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে।

পলাশ বলেন, পাঁচকক্ষ বিশিষ্ট বোতল বাড়িটি দোতলা পর্যন্ত করার ইচ্ছে আছে তার। এ পর্যন্ত বোতল ক্রয় করে বাড়িতে এনে বালু ভর্তি করতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সমপরিমাণ দেয়াল নির্মাণ করতে সাড়ে ৩ লাখ টাকার ইটের প্রয়োজন হতো। সে হিসাবে অর্ধেকের বেশি খরচ সাশ্রয় হয়েছে। 

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, এ ধরনের বাড়িতে খরচ কিছুটা কম হওয়া স্বাভাবিক। বোতল বাড়ি কতটা টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা করলে বোঝা যাবে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর