শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় বাড়ছে না বিনিয়োগ

দেশের ব্যাংকিং খাতে অলস টাকার পাহাড় জমছে। বাড়ছে না বিনিয়োগ। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজনৈতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে এলেও শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না। গত ফেব্রুয়ারিতে অলস টাকার পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। সদ্য সমাপ্ত মার্চ শেষে অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকায়। এর সিংহভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে। এর ফলে গত ছয় মাস আগেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কলমানি থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকা ধার করত। অথচ এখন এসব ব্যাংকই কলমানিতে টাকা ধার দিচ্ছে। পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর সমস্যার কারণে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না।

এ ছাড়া ব্যাংক ঋণের চড়া সুদের হারও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে অন্তত আট মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করা সম্ভব। অথচ যেকোনো এক দিনের দেশের স্থিতিশীল অর্থনেতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তিন মাসের আমদানির দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকতে হয়। নানা প্রতিকূলতার কারণে রেকর্ড পরিমাণ এ রিজার্ভ কাজে লাগাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যা অর্থবাজারে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়তই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আস্থার সংকটের কারেণ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও এটাকে বেশির ভাগ মানুষই সাময়িক অবস্থা মনে করছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না কেউই। পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের চড়া সুদের হারও এর জন্য দায়ী। তার মতে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ ফিরাতে সরকার এখনো লক্ষণীয় কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে একদিকে বিনিয়োগ বাড়ছে না অন্যদিকে ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় জমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতে অলস টাকা বেড়ে যাওয়ায় আমানতের সুদ হার কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। তবে ঋণের সুদের হার এখনো ১৭ শতাংশের কাছাকাছি। বিনিয়োগ না বাড়াতে পারলে কর্মসংস্থানও বাড়বে না। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় প্রতিনিয়তই বাড়ছে। যার ফলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যা বিনিয়োগ পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশের নিচে। গত ২০১৩ সাল জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যাংকের ঋণ আদায় ও সরবরাহ বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ছয় মাসের বিশেষ সুবিধা দেয়। এই সুবিধার পর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করেন ব্যবসায়ীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত এক বছরে ব্যাংকগুলো প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। আগের বছরের তুলনায় যা প্রায় ১০ শতাংশ কম। তবে জানুয়ারি মাসের পর এই প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতেও অতিরিক্ত তারল্যের পাহাড় জমেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার বলেন, ২০১৩ সালে যে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ব্যাংকিং খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ছিল। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই ঝুঁকি কেটে যাবে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর