বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
স্বরাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

আসবে নূর যাবে অনুপ

সরকার বলছে ‘বিনিময় নয়’

আসবে নূর যাবে অনুপ

গত কিছুদিন ধরে নানা মহলে গুঞ্জন শোনা গেলেও গতকাল ভারত-বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এটা মোটামুটি নিশ্চিত, বাংলাদেশের হাতে নূর হোসেনকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ভারতে যাচ্ছে বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে আটক থাকা উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া।
গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দুই দেশের মধ্যে ১৫তম সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, অনুপ চেটিয়াকে দ্রুতই ভারতে পাঠানো হবে এবং ভারত নূর হোসেনসহ পালিয়ে থাকা আসামিদের বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে এটি ‘বিনিময় হচ্ছে না’ বলে দাবি তার। অনুপ চেটিয়া ছাড়াও আলোচনায় ভারতের সঙ্গে সীমান্তে মৃত্যু বন্ধ, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নসহ অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানান মোজাম্মেল হক খান। অতীতের যে কোনো বৈঠকের চেয়ে আজকের (বুধবারের) বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দাবি করেন মোজাম্মেল হক খান। বৈঠকে ভারতের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অনিল গোস্বামী। বৈঠকে মানব পাচার প্রতিরোধে সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই পক্ষ।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, অনুপ চেটিয়া সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন; এখন তিনি ভারতে ফেরত যেতে চান। বৈঠকে এ বিষয়টি আমরা উপস্থাপন করেছি। এখন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যত দ্রুত সম্ভব তাকে ফেরত পাঠানো হবে। ভারতের কারাগারে আটক নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সচিব বলেন, অনুপ চেটিয়া এবং নূর হোসেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও যেসব অপরাধী ভারতে রয়েছে তাদের ফেরত দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ডিত খুনিদের ফেরত প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, বৈঠকে ভারতীয় পক্ষ জানিয়েছে, তারা নিশ্চিত নন, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ভারতে আছে কি-না। যদি থাকে তাহলে ফেরত দেওয়ার সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া বৈঠকে স্থলসীমান্ত চুক্তি, সীমান্ত হত্যা, সীমান্ত চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী ও শিশু পাচার বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মোজাম্মেল হক খান। স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, বৈঠকে তারা জানিয়েছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি শীঘ্রই অনুমোদনের পর চুক্তি করবে। ‘সীমান্তে মৃত্যুর ঘটনা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে; তবে এটি শূন্যে নামিয়ে আনতে ভারতকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে’ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান। সীমান্ত হত্যার ঘটনাগুলোকে ‘বিচ্ছিন্নভাবে হত্যা’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের এই কর্মকর্তা বলেন, স্পর্শকাতর এ বিষয়টি বৈঠকে তোলা হয়েছে। তারাও (ভারতীয় পক্ষ) বিষয়টি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিষয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে ভারতের কর্মকর্তারা ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি ছোড়ার বিষয়টি বৈঠকে তুলেছিলেন বলে জানান তিনি। স্বরাষ্ট্র সচিব দাবি করেন, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয় উত্থাপিত হয়েছে সেসব বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকে দ্বিমত করা হয়নি। দু-একটি বিষয়ে ‘তথ্যগত বিভ্রান্তি’ থাকতে পারে মনে করে তা যাচাই-বাছাই করার বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব আরও জানান, মাদক, অস্ত্র, নারী ও শিশু পাচাররোধে কঠোর হওয়ার বিষয়ে দুই পক্ষই ঐকমত্যে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে জাল মুদ্রার ব্যবহার ঠেকানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে উভয় পক্ষই মনে করে ভারত থেকে আসা বা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের গন্তব্য তৃতীয় কোনো রাষ্ট্র। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ধরা পড়া জাল ভারতীয় মুদ্রা কিংবা ভারতে ধরা পড়া বাংলাদেশের মুদ্রা এই দুই দেশে নয়, বরং তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি হয়। পাচারের শিকার নারী ও শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হওয়া এবং তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি মানবিক থেকে বিবেচনার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। দুই দেশের সীমান্ত অপরাধ ঠেকানোর বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সাবলীল ও সুন্দর এবং উভয়ের স্বার্থ সুরক্ষায় অরক্ষিত সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করে সুরক্ষার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে আন্তর্জাতিক আইন এবং বিধি মেনে ১৫০ গজের মধ্যে এই বেড়া নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর