শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
কর্মচারী রিয়াদ হত্যা

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ঘরোয়া মালিকের

আলী আজম

রাজধানীর মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। তাই সব স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ নামে ওই হোটেলের কর্মচারীকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রিয়াদের ভাই রিপন বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় এ মামলা করেন। মামলায় হোটেল মালিক সোহেল, দুই কর্মচারী জসিম ও রাজুকে  আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জসিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রিয়াদের পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার ঘরোয়া হোটেলের এক কর্মচারীর ১ হাজার ৫০০ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন সেট চুরি হয়। চুরিকে কেন্দ্র করে রিয়াদকে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যা করেন হোটেল মালিক সোহেল। হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ছিনতাই নাটক সাজিয়ে ফিল্মি গল্প তৈরি করেন তিনি। ঘটনার পর থেকে সোহেল পলাতক। ইতিমধ্যে হোটেলটি বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। পুরান ঢাকার স্বামীবাগ মিতালী স্কুল গলির ৭৩ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রিয়াদকে হত্যা করা হয়। সেখানে ঘরোয়া হোটেলের কর্মচারীরা থাকেন। পুলিশ বলছে, কর্মচারী রিয়াদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হোটেল মালিক সোহেলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১২টা ৪৪ মিনিটে সোহেল ও তার সহযোগীরা রিয়াদকে একটি পাজেরো জিপে করে ওই ভবনে নিয়ে যান। সোহেলের হাতে ছিল একটি লাঠি। রিয়াদ হেঁটে ওপরে উঠছিল। সিসিটিভির ফুটেজে আরও দেখা যায়, রাত ১টা ৭ মিনিটের দিকে রিয়াদকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে নামছেন সোহেল ও তার সহযোগীরা। পরে রিয়াদকে একই জিপে তুলে মিতালী স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে তারা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান। ওয়ারী থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি ও সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে রিয়াদের ভাই রিপনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। হত্যায় ব্যবহৃত সোহেলের অস্ত্রটি বৈধ না অবৈধ, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে ওসি জানিয়েছেন।

রিয়াদের স্বজন নজরুল ইসলাম জানান, রিয়াদের বাবা মফিজুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর দুই ছেলে রিয়াদ ও রিপনকে নিয়ে চাঁদপুর জেলার গ্রামে থাকতেন মা রোকেয়া বেগম। চার বছর আগে রিপন ও রিয়াদ ঢাকায় এসে হোটেলে চাকরি শুরু করে। সাড়ে তিন বছর ধরে রিয়াদ ঘরোয়া হোটেল কাজ করছিল। বড় ভাই রিপনও ওই হোটেলে দুই বছর কাজ করেছে। রিপন জানিয়েছে, গতকাল সকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের হাড়িয়াইন গ্রামে জানাজা শেষে রিয়াদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। রিপন জানায়, রিয়াদের জানাজা শেষে ঘরোয়া হোটেলের মালিক সোহেলের ছোট ভাই রাসেল তার মোবাইল নম্বরে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘ঢাকা আয়, দেখা কর’। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছে রিপন। এদিকে, হোটেল মালিক সোহেলকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় দোকান কর্মচারী ফেডারেশন, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম ও ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন। পৃথক বিবৃতিতে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

সর্বশেষ খবর