মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাতীয় পার্টিতে হচ্ছেটা কী

দফায় দফায় বৈঠক, রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা, এরশাদ বললেন— ব্যবস্থা নেওয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় পার্টিতে হচ্ছেটা কী

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছেন না দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ পার্টির একাংশ। রবিবার রংপুরে অবস্থানকালে এইচ এম এরশাদ জি এম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে এরশাদ ঘোষণা দেন, আগামী এপ্রিলে পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলনের। জি এম কাদেরকে আহ্বায়ক এবং সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। পার্টির চেয়ারম্যানের সম্মেলন প্রস্তুত কমিটিকেও মানছেন না তারা। দলের চেয়ারম্যানের এসব সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই গতকাল তারই স্ত্রী জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বাসায় দফায় দফায় বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যানকে মানেন না তারা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদের নাম।

নেতা-কর্মীরা বলাবলি করছেন, পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তার অনুপস্থিতিতে পার্টির মহাসচিব, মন্ত্রী, প্রেসিডিয়াম ও এমপিদের একটি অংশ বৈঠক নিয়ে গতকাল দিনভর জাতীয় পার্টি ছিল সরগরম। এদিকে জি এম কাদেরকে কো- চেয়ারম্যান ও সম্মেলন প্রস্তুতি আহ্বায়ক এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করায় দলের বড় অংশ গতকাল সকাল থেকেই তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সারা দেশ থেকেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মুঠোফোনে তাদের অভিনন্দন ও পাশে থাকার কথা জানান। জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান এরশাদের নেতৃত্বে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। জানা যায়, দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় বিকালে বৈঠক করেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। সূত্র জানায়, রওশন এরশাদকে তারা বলেন, গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করেছেন। রংপুর থেকে পার্টির সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু রওশন এরশাদ তাতে সায় দেননি। তিনি তাদের জানান, পার্টির চেয়ারম্যান রংপুর থেকে ফিরলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। প্রথম দফা বৈঠকে ব্যর্থ হয়ে তারা সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসেন। এতে দলের প্রেসিডিয়াম এবং এমপিদেরও ডাকেন। সন্ধ্যার বৈঠকে রওশন এরশাদের বাসায় মহাসচিব ও মন্ত্রীরা ছাড়াও অংশ নেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, এস এম ফয়সল চিশতী, হাজী সাইফুদ্দিন মিলন, গোলাম কিবরিয়া টিপু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, হুইপ শওকত চৌধুরী, তাজ রহমান, ফখরুল ইমাম এমপি, নূর ই হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, রওশন আরা মান্নান এমপি, নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, সেলিম উদ্দিন এমপি ও আমির হোসেন এমপি। বৈঠকে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল, মীর আবদুস সবুর আসুদ সন্ধ্যার পর থেকেই কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েকশ নেতা-কর্মী নিয়ে প্রতিদিনের মতো সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। সূত্র জানায়, সন্ধ্যার বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন অংশ নিয়েছেন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে। তাদের মধ্যে এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান সংগঠনের বিশেষ ক্ষমতাবলে জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করেছেন। তিনি একই ক্ষমতায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলুকে পার্টির প্রেসিডিয়াম করা হয়েছিল। একই ক্ষমতায় নির্বাচিত মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব করা হয়েছিল। সন্ধ্যায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠকে রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গুলশানে রওশনের বাসায় দ্বিতীয় দফায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, এরশাদ দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনেই তার ছোট ভাইকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে কোনো ফোরামেই তিনি আলোচনা করেননি। গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বলে তিনি একাই কাউকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা দিতে পারেন না। আর গঠনতন্ত্রের এমন কোনো পদও নেই। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা গঠনতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে রওশন এরশাদকে দলের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এতে দলে ভারসাম্য আসবে। তিনি বলেন, অনেক সময় একক সিদ্ধান্তে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পার্টির চেয়ারম্যান এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিলে দলের উন্নতি হবে। 

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবৈধ, শিগগিরই ব্যবস্থা : রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির   চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেছেন, যারা এই কাজটি করেছেন, দলের শৃঙ্খলা ভেঙেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার পরিপ্রেক্ষিতে গত রাতে রংপুরে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি দলের চেয়ারম্যান। আমি সভা ডাকব। আমার অনুপস্থিতিতে সভা ডেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এরশাদ বলেন, তিনি (রওশন এরশাদ) বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি পার্টির বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু করতে পারেন না। আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটি সঠিক। দলের বিরুদ্ধে যে একটা ষড়যন্ত্র চলছে, সেটা তো সবাই বুঝতে পারছে।

সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী  চেয়ারম্যানের অনুমতি না নিয়ে প্রেসিডিয়ামের কোনো সভা কেউ ডাকতে পারেন না। এটা অবৈধ। যারাই এই ষড়যন্ত্রমূলক কাজটি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই মুহূর্তে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভাবছি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সদ্য ঘোষিত দলের কো- চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী  চেয়ারম্যানের বাইরে জাতীয় পার্টির কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। চেয়ারম্যান আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি সেই দায়িত্ব পালন করব। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলকে নিয়ে একটি ষড়যন্ত্র চলছে। দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা চলছে। আমরা শক্ত হাতে বিষয়টি মোকাবিলা করব।

সর্বশেষ খবর