বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপিতে কমিটি রহস্য

মাহমুদ আজহার

বিএনপিতে কমিটি রহস্য

‘কমিটি রহস্য’ নিয়ে হতাশা বাড়ছে বিএনপিতে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার বিড়ম্বনায় বন্ধ হয়ে গেছে দলের জেলা পর্যায়ের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও। জাতীয় কাউন্সিলের প্রায় আড়াই মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। অবশ্য রমজানের আগেই পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণা হতেও পারে বলে ‘আশার কথা’ জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক নেতা। তবে ঈদুল ফিতরের আগে তৃণমূল পর্যায়ে কাউন্সিল কিংবা কমিটি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা কম। কেন্দ্রীয় নেতাদের সেদিকে মনোযোগও নেই। সবাই এখন ব্যস্ত নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে। জেলার শীর্ষ নেতারাও নির্বাহী কমিটিতে ঠাঁই পেতে মরিয়া। জেলা নিয়ে ভাবনা মাথায় নেই তাদের। অন্যথায় ঈদের পর নির্বাহী কমিটি ঘোষণা হতে পারে বলে দলের ওই নেতারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপির কাউন্সিলের পর আংশিক কমিটি হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই অবশিষ্ট কমিটি ঘোষণা হবে। ইউপি নির্বাচনও চলছে। শহীদ রাষ্ট্রপতিক জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীও পালিত হচ্ছে। দলের পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে কোনো সময় দলের নির্বাহী কমিটিও ঘোষণা হতে পারে।’ সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী কমিটিতে কাকে রাখবেন, কাকে বাদ দেবেন— তা নিয়েই সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন বিএনপির হাইকমান্ড। এ নিয়ে একটা চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছেছে দলটি। নতুন করে পদপ্রত্যাশী অন্তত দেড় ডজন নেতা যার যার মতো করে লবিং করে যাচ্ছেন। তবে ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে তেমন ঝামেলা দেখছেন না নীতিনির্ধারকরা। গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদ, দফতর বিভাগ, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকসহ আরও কয়েকটি আকর্ষণীয় পদে নেতাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। এসব পদ ঘিরেও নেতাদের ব্যাপক তদবির ছিল। নির্বাহী কমিটিতে যেতেও জেলা পর্যায়ের নেতারা প্রভাবশালীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। লবিং, তদবির আর নানা হিসাব-নিকাশের কারণেই পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি করতে বিলম্ব হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তহীনতা বিএনপিকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর মাশুল দিতে হচ্ছে। কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপিকে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। এর মধ্যে অনেক ইস্যুই শেষ হয়ে যায়। রাজনীতিতে ভুল হতেই পারে। এজন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, তা ঠিক নয়।

এদিকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি না হওয়ায় জেলা পর্যায়ের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও আটকে গেছে। গেল বছরের ৯ আগস্ট তৃণমূলে চিঠি পাঠিয়ে এক মাসের মধ্যে জেলা কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। এরপর দীর্ঘদিনেও রাঙামাটি ও কুড়িগ্রাম ছাড়া আর কোনো জেলা সম্মেলন হয়নি। মার্চের জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই ফের তৃণমূল পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন দলের হাইকমান্ড। এ লক্ষ্যে ১১টি কমিটিও গঠন করা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সিলেট জেলা, মহানগর, ঝিনাইদহসহ কয়েকটি জেলায় কাউন্সিল সম্পন্নও করে দলটি।

এ ছাড়া গাইবান্ধা, নওগাঁ, রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, লালমনিরহাট, কুষ্টিয়া, রংপুর, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও রাজবাড়ী জেলা সম্মেলন করার প্রস্তুতি অনেক দূর এগোয়। বেশ কয়েকটি জেলার তারিখও ঘোষণা হয়। কিন্তু ১০ মার্চ কাউন্সিল সামনে রেখে তৃণমূলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বন্ধে চিঠি পাঠায় বিএনপি। এরপর ১৯ মার্চ কাউন্সিল হয়। ৪২ সদস্যের আংশিক কমিটিও ঘোষণা হয়। তবে জেলা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আর শুরু হয়নি।

এর আগে ২০১৪ সালের এপ্রিলে পঞ্চগড়, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, নওগাঁ, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম উত্তর, ময়মনসিংহ উত্তরসহ ১৪টি জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ওইসব জেলায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আরও নাজুক বলে জানা গেছে। সর্বশেষ মাগুরায় বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। ওই জেলার কোন্দলও এখন প্রকাশ্যে বলে জানা গেছে।

এদিকে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ঘোষণা করা হয় ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি। দুই মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির সব ওয়ার্ড, থানা কমিটি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আহ্বায়ক কমিটিকে। এখন পর্যন্ত একটি ওয়ার্ড কমিটিও হয়নি। এখন নতুন করে মহানগর কমিটি দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। ঢাকা মহানগরকে চার ভাগও করা হতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, দুই ভাগও হতে পারে। দলীয় সূত্র জানায়, এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় খোদ বিএনপি চেয়ারপারসনও।

সূত্র জানায়, নির্বাহী কমিটির আগে ঢাকা মহানগর কমিটি দেবেন না বেগম জিয়া। রমজানের মধ্যেই জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা হতে পারে। চেয়ারপারসনের পাশাপাশি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অঙ্গসংগঠনের কমিটি নিয়ে কাজ করছেন। যুবদলের শীর্ষ নেতৃত্বে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ ও নুরুল ইসলাম নয়নের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলে মীর সরাফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, আমিরুল ইসলাম খান আলীম ও আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের নামও আলোচনায় আছে। তবে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউপি নির্বাচন চলছে। এজন্য আপাতত জেলা পর্যায়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। নির্বাচনের পরপর আবারও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলবে। তিনি বলেন, কাউন্সিলের আগেই ১৫টি জেলার সম্মেলন হয়েছে। আরও অন্তত ৩০টি জেলা কাউন্সিল উপযোগী। যে কোনো সময় এসব জেলা পুনর্গঠন করা যাবে। জেলা পুনর্গঠনে কাউন্সিল কোনো বাধা নয় বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর