বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিষিদ্ধ আতঙ্কে নিষ্ক্রিয় জামায়াত!

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নিষিদ্ধ হওয়ার আতঙ্কে রাজপথে নিষ্ক্রিয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রতিষ্ঠার পর বর্তমানে সবচেয়ে বিপদে থাকলেও আতঙ্কে মাঠ ছেড়ে ঘরোয়া পরিবেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। চলতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নেতা-কর্মীরা ব্যাপক অংশগ্রহণের কথা আগে আভাস দিলেও তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যেসব স্থানে নেতা-কর্মীদের অবস্থান শক্তিশালী সেসব স্থানেও বেশ নিষ্ক্রিয়তা। চলতি বাজেট অধিবেশনেই দলটি নিষিদ্ধের বিল সংসদে উঠতে পারে বলে জানা গেছে। গত ১৬ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক আলোচনায় অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে জুনে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। জানা যায়, মগবাজারে কেন্দ্রীয়, পল্টনে মহানগর জামায়াত ও শিবিরের কেন্দ্রীয়সহ সারা দেশে এই দলের সব কার্যালয় বছরের পর বছর ধরে বন্ধ। নেতা-কর্মীরা কোথাও কেউ প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কাজ করতে পারছেন না। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ শীর্ষ চার নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা আবদুস সুবহান, এ টি এম আজহার ও মীর কাসেম আলী।

জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, দেশব্যাপী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দমননীতি চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায়ও ভীত নয় জামায়াত। রাজপথে নেমে আবার তারা সরকারের ফাঁদেও পা দিচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, সরকার যত নিপীড়নই চালাক, জামায়াত তার অবস্থান থেকে একচুলও সরবে না। আর নিপীড়ন চালিয়ে এ সরকারও বেশি দিন থাকতে পারবে না। জামায়াতের একাধিক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জানান, পুলিশ প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে প্রকাশ্যে বের হওয়া দূরের কথা, ঘরের ভিতরও পাঁচজন সদস্য এক হতে পারছেন না। এমনকি পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও ‘ষড়যন্ত্র করছে’ বলে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও যশোর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হাঁটুর নিচে গুলি করার অভিযোগ করেছে জামায়াত। এতে অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন, আবার অনেকের পা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের প্রায় সব নেতা-কর্মীই এখন কোনো না কোনো মামলার আসামি। ছাত্রশিবিরের বহু সদস্যের শিক্ষাজীবন বিনষ্ট হয়ে গেছে। দলটির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি উচ্চ আদালতে মীমাংসার অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে রীতিমতো বিপর্যস্ত জামায়াত। সূত্রটি আরও জানায়, লন্ডনে অবস্থানরত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। জামায়াতকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ২০-দলীয় জোট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে আসার জন্য। জামায়াত পৃথকভাবে থাকলে তার নিবন্ধন বাতিল করা হবে না। যুদ্ধাপরাধের মামলায় দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় নিয়েও কথা হয়। কিন্তু ব্যারিস্টার রাজ্জাক কোনো সমঝোতায় আসেননি। আর সেজন্যই তিনি এখন পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারছেন না। দলীয় নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা, ব্যারিস্টার রাজ্জাক দেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই তাকে আটক করা হবে। মিডিয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারাধীন দলের শীর্ষ নেতাদের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের কর্তাব্যক্তি, কূটনীতিক ও দেশ দুটির প্রভাবশালী সরকারি-বেসরকারি লোকদের সঙ্গেও দেখা করছেন তিনি। এদিকে দলের নেতারা মনে করেন, আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে ভালোই চলছে জামায়াত। অজ্ঞাত স্থান থেকে নিয়মিত মিডিয়ায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠাচ্ছেন তারা। মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুকের মাধ্যমে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছেন। তাদের সমর্থকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খরচ বহন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা বলেন, দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মীর বাসা আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই এখন জামায়াতের অফিস। তিনি বলেন, ‘জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে সাংবিধানিক পন্থায় রাজনীতি করছে। দেশের সংবিধান ও আইন অনুসরণ করেই নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে নিবন্ধন দিয়েছিল। এরই মধ্যে জামায়াত গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছে। আমরা আশাবাদী উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাব।’ তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত রাজপথে না এসে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই চলবে জামায়াতের কার্যক্রম।

সর্বশেষ খবর