আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সুদ দিতে আরও বেশি সরকারের খরচ বৃদ্ধি পাওয়া বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন দেশের থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক খ্যাত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অন্যদিকে শিক্ষা, রেল-যোগাযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পাওয়াকে ইতিবাচক মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ। গতকাল জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাজেট প্রস্তাব পেশের পর প্রাথমিক বিশ্লেষণে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অর্থনীতির গভীর বিশ্লেষক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে জিডিপির অঙ্ক যে ২ শতাংশ বৃদ্ধি হবে এর বড় অংশ যাবে অনুন্নয়ন ব্যয়ে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তুলনামূলক কম বাড়বে। এই ব্যয়ের একটা বড় অংশ সুদ হিসেবে সরকারকে পরিশোধ করতে হবে। আগে বাংলাদেশকে বেশি সুদ দিতে হতো বৈদেশিক সাহায্যের জন্য। এখন সুদ বেশি দিতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ ঋণের জন্য। আগামী অর্থবছরে সুদ আরও বেশি বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ব্যয়ের খাত হিসেবে এটা বড় দুর্বলতা বা অশনিসংকেত হিসেবে দেখছি।’ দেশের এই বিশিষ্ট নাগরিক শিক্ষা, রেল-যোগাযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করায় সরকারকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা খুব খুশি হয়েছি। শিক্ষা খাতে সরকার প্রতিশ্রুত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বড় ব্যয় রেলে দরকার। এবার সরকার রেলের উন্নয়নে ব্যয় বাড়িয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গরিব-দুস্থ মানুষের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই তিন খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানোকে আমরা সমর্থন জানাই।’ বাজেটে আর্থিক পদক্ষেপ প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার একটা স্থিতিশীল করনীতিতে আছে। করমুক্ত আয়সীমা, ন্যূনতম করহারে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমনকি শিল্প খাতের করপোরেট করের ক্ষেত্রেও তেমন বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার একটা স্থিতিশীল করনীতিতে আছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের টার্নওভার কর বাড়ানো সঠিক বলে মনে করেন এই নীতি বিশ্লেষক। ড. দেবপ্রিয় মনে করেন, ‘অর্থনীতির সক্ষমতা ও কৌশলে একটা বড় সংস্কার লাগবে। ব্যাংকিং খাতে সংকট চলছে। সেখানে আবারও ২ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যারা টাকা নিয়ে টাকা শোধ দিল না, তাদের চুরি করা অর্থ শোধ করতে করদাতাদের জরিমানা দিতে হবে। আমরা কেন সেই টাকা কর হিসেবে দেব!’ তার দাবি, কৃষিতে বরাদ্দ বাড়েনি। কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এজন্য একটা কৃষি ন্যায্যমূল্য কমিশন গঠন করা দরকার। এ সংস্কার ব্যতিরেকে সে কৌশলে সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে বোঝা গেল, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল যে সমস্যা আছে, সেগুলোর বিষয়ে তিনি (অর্থমন্ত্রী) অবহিত। তিনি বলেন, ‘আমিও তার সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় অর্থমন্ত্রীর চিন্তা গ্রহণযোগ্য। তবে মূল সমস্যা চ্যালেঞ্জগুলো বাস্তবায়নের কৌশল ও এর সক্ষমতা নিয়ে। যে কৌশলের মাধ্যমে বাজেট বাস্তবায়ন হবে, সেই পথ অর্থমন্ত্রী দেখালেন না। এটা একটা চিন্তার বিষয়। তবে অর্থমন্ত্রী শিক্ষা বাজেট ও উৎপাদনশীলতা নিয়ে যে নির্দেশিকা দিয়েছেন, তাতে স্বাগত জানাই।’ এই অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতিতে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রয়োজন মনে করি। তবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশল ও সক্ষমতা আমার কাছে চিন্তার বিষয়। কারণ গত দুই বছরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে পতন হয়েছে। আগামী বছর বাড়তি ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ দরকার। ব্যক্তি খাতে কীভাবে এই বাড়তি টাকা আসবে, তা এখন বড় বিবেচ্য বিষয়।’ বাজেটের আর্থিক কাঠামো বিশ্লেষণ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে জিডিপির অংশ হিসেবে ২ শতাংশ আয় বাড়তে হবে। আবার ২ শতাংশ ব্যয়ও বাড়বে। এই ২ শতাংশ কোথা থেকে আসবে। এটা আলোচনার বিষয়। তবে বাংলাদেশে আয় বাড়াতে হলে আয়কর দিয়েই বাড়ানো উচিত। যার সক্ষমতা যত বেশি, তাকে তত বেশি কর দিতে হবে। দ্বিতীয় বড় আয় আসবে ভ্যাট থেকে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন এ বছর স্থগিত করা হয়েছে এক বছরের জন্য। এটা সঠিক হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ সরকার ও ব্যবসায়ীরা কেউ নতুন আইন বাস্তবায়নে প্রস্তুত নয়। তবে এ বছর যেন প্রস্তুতির জন্য ভালোভাবে ব্যয় করা হয়। এটা এখন বড় বিষয়।’ অর্থনীতিবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক এই সাধারণ সম্পাদকের মতে, বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা দিয়ে ধনী-গরিবের ব্যবধান কিছুটা কমাতে পারলে তা হবে বড় বিষয়। এ ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে সারচার্জ পরিবর্তনের পদক্ষেপ সঠিক। এতে সম্পদশালীরা বেশি কর দেবেন বলে মনে করেন এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
শিরোনাম
- হারের পর বোলারদের ‘সরি’ বললেন লিটন
- মেট্রো রেলে ঝাঁকুনি, কারওয়ান বাজার-আগারগাঁও রুটে চলাচল বন্ধ
- স্বর্ণের দাম ভরিতে বাড়লো ৮ হাজার ৯০০ টাকা
- এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের
- ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে বাড়ছে না চিকিৎসকের পদ
- সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার রোধে দুই সেল গঠনের চিন্তা
- সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযান, গ্রেফতার ১৪৩২
- মাদক মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা চালু করতে না পারলে পিছিয়ে যাব : এ্যানি
- টিকটক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিইসির বৈঠকে ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে আলোচনা
- বন্দরের বাড়তি ট্যারিফ নিয়ে শীঘ্রই স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক হবে : আমীর হুমায়ুন
- সিরিজে টিকে থাকতে বাংলাদেশের দরকার ১৫০ রান
- নির্বাচনকালে নিজ বা শ্বশুরবাড়ি এলাকায় পোস্টিং হবে না
- শিক্ষায় পচন এত যে কমিশন করলেই সেরে যাবে না : পরিকল্পনা উপদেষ্টা
- প্লট দুর্নীতি : হাসিনা-পুতুল-জয়ের বিরুদ্ধে আরও ৮ জনের সাক্ষ্য
- সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বই আকারে প্রকাশে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
- আগামীর নতুন বাংলাদেশ হবে শিক্ষানির্ভর : আমীর খসরু
- মেট্রোরেল যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ ডিএমটিসিএলের
- ক্লাস শুরুর দাবিতে অনশনে প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা
- জলবায়ু পরিবর্তন সভ্যতাকে শেষ করবে না : বিল গেটস
- স্কুলে ভর্তিতে লটারি পদ্ধতি বহাল থাকছে আগামী শিক্ষাবর্ষেও
বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ ও সক্ষমতা অর্জনই বড় চ্যালেঞ্জ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর
মাদুরোকে ধরার গুপ্তচর নাটক: পাইলটকে প্রলুব্ধ করে ব্যর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র
২৩ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম
১০০ বিলিয়ন ডলারের নগরী এখন ভূতুড়ে; জনশূন্য আকাশচুম্বী অট্টালিকা, জল ভরা কুমিরে!
৯ ঘণ্টা আগে | পাঁচফোড়ন