মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

বনানীতে ফারাজ অবিন্তাকে দাফন ইশরাত গাজীপুরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানের হলি আর্টিজানে শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ফারাজ আয়াজ হোসেন ও অবিন্তা কবিরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানীর বনানী কবরস্থানে গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় ফারাজকে তার খালা শাজনীন তাসনিম রহমানের পাশের কবরে দাফন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. ফাহিম। বাদ আসর জানাজা নামাজ শেষে তাদের দুজনকেই দাফন করা হয় বনানী কবরস্থানে। অবিন্তার কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে আজ বাদ আসর। আর ফারাজের কুলখানি হবে আগামী রবিবার বাদ আসর। এদিকে একই ঘটনায় নিহত ইশরাত আকন্দকে গতকাল গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকায় দাফন করা হয়েছে। পারিবারিক সূত্র জানায়, সকালে আর্মি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীসহ দেশি-বিদেশি নাগরিকদের শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুর পৌনে ১টায় ইশরাতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ফারাজের নামাজে জানাজায় অংশ নিয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী লতিফুর রহমান, বাবা ওয়াকার হোসেন, বড় ভাই জারিফ আয়য়াজ হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ফারাজ আয়য়াজ হোসেনের স্বজনরা বলেন, ক্ষমা চেয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেল ছেলেটি। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু তার আর ফিরে আসা হলো না। জিম্মিদশার করুণ পরিস্থিতির কথা নিজের পরিবারকেও জানিয়েছিল ফারাজ। তার দায়িত্ববোধ আমাদের নাড়া দেবে সারা জীবন। ছায়া হয়ে থাকবে প্রতিটি মুহূর্তে। জানাজার আগে অবিন্তা কবিরের বাবা এহসানুল কবির এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুক্রবার এক মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলায় আমার মেয়ে নিহত হয়। মেয়ের কাছ থেকে কারও কিছু দেনা-পাওনা থাকলে আপনারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নেবেন।’ ফারাজ আয়াজ হোসেনের বড় ভাই জারিফ আয়াজ হোসেন বলেন, “আমার ছোট ভাই ফারাজ আয়াজ হোসেনকে আমরা ‘ছোট’ বলে ডাকতাম। আমার ছোট ভাই বর্বর সন্ত্রাসী হামলায় শাহাদাত বরণ করেছে। জীবনের চলার পথে সে কারও মনে কষ্ট দিলে আপনারা তাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দেনা-পাওনা থাকলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’ সজল চোখে তাকিয়ে নিজের বন্ধুর কিছু কথা জানান জায়াজ। তিনি বলেন, “ফারাজকে হারানো এক অবর্ণনীয় বিয়োগ। সে বাসা থেকে এক ঘণ্টার সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। সেখান থেকে এসে আমার সঙ্গে দেখা করার কথা। কিন্তু ঘটনার মুহূর্তে আমাকে এসএমএস করে জানায় খুব বিপদে আছে, ফিরতে পারবে কিনা জানে না। দেখা না করার জন্য ‘সরি’ বলে ফারাজ। এ খবর সে তার পরিবারকেও জানিয়েছিল।” আর মামার বাড়িতে ঈদ করবেন বলে কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে মায়ের সঙ্গে দেশে এসেছিলেন অবিন্তা কবির। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ করা হলো না তার। কথাগুলো বলছিলেন অবিন্তার মা রুপা আহমেদের অফিসে কর্মরত মোস্তফা। জানাজায় অংশ নিতে আসা বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘ধারণা করছি এ হামলা আইএস নয়, অন্য কেউ করেছে। তরুণরা যে পথে যাচ্ছে সবই সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে।’

গাজীপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত ইশরাত : আর্মি স্টেডিয়াম থেকে ইশরাতের লাশ উত্তরায় নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুর পৌনে ২টায় বাসার পাশে উত্তরায় বাদশার টেক জামে মসজিদে ইশরাতের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকাল ৩টায় ইশরাতের লাশ ঢাকা থেকে গাজীপুরে নেওয়া হয়। পরে সেখানে সাড়ে ৪টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হয়। ইশরাতের স্বজনরা জানান, তার ভাই ড. আবদুল্লাহ ইউসুফ আকন্দ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বায়োটেকনোলজি বিভাগের সায়েন্টিফিক কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে এ এলাকায় দাফন করা হয়। গাজীপুরে ইশরাতের জানাজায় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোশারফ হোসেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ইশরাতের বড় ভাই আলী হায়াত আখন্দ ও তার অন্য ভাই ইউসুফ আকন্দ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। ইশরাত আকন্দ ছিলেন একজন শিল্পানুরাগী। তিনি ZXY international FZCOহিউম্যান রিসোর্সেসের ডিরেক্টর এবং ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভের প্রভোকিউটর ছিলেন। এর আগে তিনি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএতে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন ওয়েস্টিন হোটেলের মার্কেটিং ডিরেক্টর। তিনি গ্রামীণ এবং ব্র্যাকনেটেও কাজ করেছেন। ইশরাত বাংলাদেশের নতুন শিল্পীদের প্লাটফরম দেওয়ার জন্য কাজ করতেন। তরুণ শিল্পীদের সহায়তায় এগিয়ে আসা ইশরাত শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছে ছিল পরিচিত নাম। ইশরাত অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। শুক্রবার হামলার রাতে ইশরাত হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে এক ইতালীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন। পরদিন কমান্ডো অভিযানের পর রেস্তোরাঁ থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানে ইশরাতের লাশও ছিল। ইশরাত তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট।

সর্বশেষ খবর