শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনা সভানেত্রী কাদের সম্পাদক হচ্ছেন

প্রেসিডিয়াম যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদকীয় পদে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে, কমিটি হবে ২০১৮ নির্বাচন উপযোগী, উপদ্রব থাকবে না হাইব্রিডদের

রফিকুল ইসলাম রনি

শেখ হাসিনা সভানেত্রী কাদের সম্পাদক হচ্ছেন

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন আজ। আগামীকাল রবিবার কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে গঠিত হবে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব। এবারের সম্মেলনে টানা অষ্টমবার সভানেত্রী পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হচ্ছেন, এটি শতভাগ নিশ্চিত। এ পদে দ্বিতীয় কোনো নেতার নাম আলোচনায় আসছে না। আর টানা দুবারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্থলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে পরবর্তী দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে পরিবর্তন আসছে। সিংহভাগ নতুন মুখ দেখা যাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে। ব্যাপক পরিবর্তন হবে সম্পাদকমণ্ডলীতে। শুধু তাই নয়, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পদেও আসছে দুই তৃতীয়াংশ নতুন মুখ। বিতর্কিত, অদক্ষ, পদপদবি বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া দুর্নীতিগ্রস্তদের বাদ দেওয়া হবে। নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হবে ক্লিন ইমেজের মাঠের জনপ্রিয় নেতাদের। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঢেলে সাজানো হবে ২০১৮ সালের নির্বাচন সামনে রেখে। দলীয় সূত্রমতে, নতুন কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনে গুরুত্ব দেওয়া হবে সাবেক ছাত্রনেতাদের। বিবেচনা করা হবে মাঠের জনপ্রিয়তা, অতীতের সাংগঠনিক দক্ষতা, দলের ও নেত্রীর প্রতি আনুগত্য। উৎপাত থাকবে না হাইব্রিড নেতাদের। দলীয় সূত্রমতে, দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে যারা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন, বিদেশে বাড়ি কিনেছেন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন নির্বাচনে দলের নৌকা জামায়াত-বিএনপির লোকের হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন তাদের এবার দলে রাখা হচ্ছে না। বিদায় জানানো হবে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া-ঘুমিয়ে পড়া নেতাদেরও। রাখা হবে না দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনে সারা দেশে সংগঠন শক্তিশালী করার পরিবর্তে নিজ এলাকার আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত ছিলেন, যেসব নেতাকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ ও র‌্যাব প্রহরায় নিজ এলাকায় যেতে হয়েছে বা হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনতে হয়েছে এমন নেতাদের। এসব নেতা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগে দাপটের সঙ্গে থাকলেও ধীরে ধীরে ক্ষমতা কমিয়ে তাদের স্থলে অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজ, শিক্ষিত ও উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন নেতাদের নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় আওয়ামী লীগ। আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে জেলা এবং বিভাগ কোটায় যারা রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে, তাদের কয়েকজনের জায়গায় আসতে পারে ওই এলাকার নতুন মুখ। তবে ফুরফুরে মেজাজে থাকা আলালের ঘরের দুলালরাও স্থান পাবেন না এবারের হাইপ্রোফাইলের কমিটিতে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের সর্বশেষ সম্মেলনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সম্পাদকমণ্ডলীর দুয়েকটি পদে মুখ পরিবর্তন আর কয়েকজন নতুন সদস্য মনোনয়নের মধ্য দিয়ে গঠিত হয় ১৯তম সম্মেলন-পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার অনেকটা শক্ত হাতে দেশ চালাচ্ছে। রাজনীতির মাঠে নেই তেমন কোনো শক্তিশালী বিরোধী দল। এজন্য দলের সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যাপক হারে কাঁচি চালানো হবে এবারের সম্মেলনে।

আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্যসংখ্যা ১৫। এর মধ্যে দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক পদাধিকারবলে প্রেসিডিয়াম সদস্য। এবারে প্রেসিডিয়ামের সদস্যসংখ্যা ৪টি বাড়িয়ে ১৯ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের পর গঠিত কমিটিতে প্রেসিডিয়ামের দুটি পদ শূন্য রাখা হয়েছিল। পরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে প্রেসিডিয়ামে আনা হয়। আর প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন। লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফলে বর্তমান কমিটিতে প্রেসিডিয়ামে তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। চারটি সৃষ্টপদে মোট সাতজন আসবেন নতুন মুখ। তবে বর্তমানে প্রেসিডিয়ামে থাকা দুই থেকে তিনজনের স্থান হতে পারে উপদেষ্টা পরিষদে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিন থেকে বেড়ে চারজন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাত থেকে বেড়ে আটজন এবং কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আরও দুজন বাড়ানো হয়েছে এবার। যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকমণ্ডলীর অধিকাংশ পদেই দেখা যাবে নতুন মুখ। কেউ কেউ ছিটকে পড়তে পারেন কেন্দ্রীয় পদ থেকে। এবারের কাউন্সিলে নতুন করে কয়েকজন নারী সদস্য স্থান পেতে পারেন। সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি আওয়ামী লীগের আজকের সম্মেলনের দিকে। একটানা ৩৫ বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বর্তমানে মহীরুহে পরিণত হওয়া সুবিশাল এ দলটিকে আগামী নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেমন ধরনের নেতৃত্ব আনছেন সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে পুরো দেশের মানুষ। কে পদোন্নতি পাচ্ছেন, কে পদ হারিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়বেন— এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বঙ্গবন্ধুকন্যা সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়া অন্য কাউকে সভানেত্রী পদে কাউন্সিলররা মেনে নেবেন না— এটা সর্বজনবিদিত। তাই আজকের সম্মেলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা অষ্টমবারের মতো দলের সভানেত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হচ্ছেন। আগামী নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি দলকে প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং সারা দেশে নৌকার পক্ষে জনজোয়ার তুলতে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটি তুলে দেবেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঠের রাজনীতিক, কর্মীবান্ধব ওবায়দুল কাদেরকে। ইতিমধ্যে তাকে সাধারণ সম্পাদক করার ইঙ্গিত দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সূত্রমতে, সম্মেলনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রাশিদুল আলমের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ভোটের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ব্যালট পেপারও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গেছে, ভোটের বদলে সমঝোতার মাধ্যমেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। কাউন্সিলরদের ভোটে নতুন নেতৃত্ব গঠনে সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের কোনো সম্ভাবনা নেই।

সর্বশেষ খবর