শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংহতি-সম্পৃক্ততা বাড়াল বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সংহতি-সম্পৃক্ততা বাড়াল বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিন

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে গতকাল ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাসস

ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা, সমবেদনা ও দৃঢ় সংহতির কথা জোরালোভাবে আরেক দফা ঘোষণা করল বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের সফররত প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে গতকাল বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে এ ঘনিষ্ঠতার কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে অবস্থানের কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মহান নেতা ইয়াসির আরাফাতের উত্তরসূরিকে। সফরের দ্বিতীয় দিনে গত বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাসিনা-আব্বাস বৈঠক হয়। এ ছাড়াও বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নৈশভোজেও কথা হয়েছে শেখ হাসিনা ও মাহমুদ আব্বাসের। আজ দুপুরে বিশেষ বিমানে ঢাকা ছাড়বেন অতিথি প্রেসিডেন্ট।

পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা জানান, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানিয়ে তার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। দুপুরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। তিনি সেখানে পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর এবং বকুল ফুলের একটি চারা রোপণ করেন। পরে প্রেসিডেন্ট আব্বাস ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। জাতির জনকের নাতি রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক তাকে জাদুঘর ঘুরে দেখান। সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ৩২ নম্বর থেকে বিকাল সাড়ে ৩টায় তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে ফুলের তোড়া দিয়ে ফিলিস্তিনবাসীর নেতাকে অভ্যর্থনা জানান শেখ হাসিনা। সেখানে একান্তে আলোচনার পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। স্বাক্ষর হয় দুই দেশের যৌথ কমিশন গঠনে একটি সমঝোতা স্মারক।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই সফরের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের জাতিসত্তার  প্রতি বাংলাদেশের যে চিরন্তন সমর্থন; তা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। ইসরায়েলের আগ্রাসনবাদী পদক্ষেপের বিপরীতে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা আমরা শুনে আসছিলাম। কিন্তু আজ সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। বহু আগে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। বাংলাদেশ শুরু থেকেই এর পক্ষে, এখন পুনরায় সমর্থন ব্যক্ত করা হলো। এখন নতুন করে পূর্ব তীরে ইসরায়েল বসতি স্থাপনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য বাংলাদেশের যে ‘চিরন্তন’ সমর্থন আছে, তাও অব্যাহত থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের নেতা ইয়াসির আরাফাতের গভীর বন্ধুত্বের কথাও বৈঠকে উঠে আসে। আগের মতো বাংলাদেশকে সবসময় পাশে পাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানান মাহমুদ। কৃতজ্ঞতা জানান ইসরায়েলকে এখনো বাংলাদেশের স্বীকৃতি না দেওয়াকে।’ পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ফিলিস্তিন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও, বাংলাদেশ এখনো ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশ তখনই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে, যখন দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের বহুদিন ধরে ঢাকায় বৃত্তি দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আব্বাস।

দুই দেশের বৈঠকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গী ছিলেন সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রিয়াদ আল মালকী, প্রধান বিচারপতি মাহমুদ আলহাব্বাশ, রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র নাবিল আবুরুদ্দাইনাহ, কূটনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মাজদি খালিদসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী  তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, উপদেষ্টা গওহর রিজভী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। দ্বিপক্ষীয় বেঠকে দুই দেশের একটি যৌথ কমিটি গঠনে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। শেখ হাসিনা ও মাহমুদ আব্বাসের উপস্থিতিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এতে সই করেন। সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব জানান, এর ফলে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। বাড়বে ঘনিষ্ঠতা ও সম্পৃক্ততা। রাতে মাহমুদ আব্বাসের সম্মানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নৈশভোজের আয়োজন হয়। তিন দিনের সফরে বুধবার ঢাকায় আসেন মাহমুদ আব্বাস। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই বাংলাদেশে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। এর আগে গত বছর জাপান যাওয়ার পথে যাত্রা বিরতি করেছিলেন ঢাকায়। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প  প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে ঢাকায় সফর করছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর