শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্রীড়া পল্লী অলিম্পিক কমপ্লেক্স হবে পদ্মার চরে : প্রধানমন্ত্রী

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার খেলাধুলার মান উন্নয়নে পদ্মার চরে একটি ক্রীড়া পল্লী এবং অলিম্পিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, যুব সমাজকে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখতে হবে। সেটা করতে গেলে খেলাধুলা ও সংস্কৃতির চর্চা একান্তভাবে জরুরি। সেই পদক্ষেপই আমরা নিচ্ছি।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে গতকাল ৪র্থ রোল বল বিশ্বকাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।  তিনি রোল বল বিশ্বকাপের পুরুষ ও মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ভারত এবং রানার্স আপ ইরানের হাতে ট্রফি তুলে দেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ১৩ বছরের  হৃদয় সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গ্রহণ করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সের নামফলক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার,  ৪র্থ রোল বল বিশ্বকাপের আয়োজন কমিটির প্রধান মো. আবুল কালাম আজাদ বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের পদ্মা সেতু তৈরি হচ্ছে। সেই পদ্মার চরেই আমরা একটি উন্নতমানের ক্রীড়া পল্লী গড়ে তুলব। যেখানে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা আয়োজন এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। একটি অলিম্পিক কমপ্লেক্সও আমরা ওখানে তৈরি করতে চাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকাল খেলা মাঠে গড়ালে তা খেলোয়াড়দের মধ্যে কেবল বন্ধুত্ব কিংবা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ‘ট্রাক থ্রি ডিপলোমেসি’র এই সময়ে খেলাও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, আঞ্চলিক সম্পর্ককেও মজবুত করতে পারে। তিনি ৪র্থ রোল বল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও ক্রীড়াবিদদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এবারের আয়োজনে অংশ নেওয়া ৬২৫ জন ক্রীড়াবিদ বাংলাদেশ দেখে গেলেন। আপনারা নিজের দেশে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোল বল স্কেটিং’ প্রতিযোগিতায় পুরুষ ক্রীড়াবিদদের পাশাপাশি মহিলা ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নারী-পুরুষের সমতা ও সমঅধিকার অর্জনের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। আমাদের সরকার নারীবান্ধব নীতি অবলম্বন করে সমাজের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি নারী ক্রীড়াবিদদের উত্তরোত্তর সাফল্যও কামনা করেন। জাতির পিতা বাংলাদেশকে সব ক্ষেত্রে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ শুধু অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নয়, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বিশ্বের কাছে অনুস্মরণীয় একটি মডেল। ইতিপূর্বে আমরা আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ, এশিয়ান কাপ, সাফ গেমস্্, আন্তর্জাতিক টেবিল টেনিস ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ফুটবল কাপসহ অনেক আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। যা দেশ-বিদেশে প্রশংসা অর্জন করেছে। ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন একটি অতি পরিচিত নাম। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৮ ফুটবলে বাংলাদেশের সফলতা এবং নারী ক্রিকেট দলের সাফল্যে আমরা গর্বিত। আর ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এখন একটি শক্তিশালী দল। তিনি বলেন, হকি, শুটিং, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, আরচ্যারি, জিমন্যাস্টিক্স ও বিচ ফুটবলসহ বিভিন্ন ইভেন্টে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ অলিম্পিকেও বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। বর্তমান সরকার খেলাধুলার প্রতি যথেষ্ট নজর দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও বেশি করে খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। সে কারণে আমরা প্রাইমারী স্কুল থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত স্কুলে ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে প্রতিযোগিতার একটি পরিবেশ গড়ে তুলেছি। সেখান থেকেই পারদর্শিতা অর্জন করে আমাদের আগামী দিনের খেলোয়াড়রা বের হয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সারা দেশে সব উপজেলায় স্টেডিয়াম স্থাপনসহ জেলা পর্যায়ে স্টেডিয়াম উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ করছে। তা ছাড়া বড় বড় শহরে সুইমিংপুল নির্মাণসহ বিশেষায়িত ও আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরির মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. জাহিদ আহসান রাসেল, আন্তর্জাতিক রোল বল ফেডারেশনের সভাপতি পেনিয়া কাবিঙ্গে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজু ডাবাদে এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এ উপলক্ষে এক মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সর্বশেষ খবর