মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

অর্থনীতির নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের রিচার্ড থেলার

প্রতিদিন ডেস্ক

অর্থনীতির নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের রিচার্ড থেলার

এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ রিচার্ড এইচ থেলার। অর্থনৈতিক আচরণের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের জন্য তাকে এবার এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি ঘোষণা দেয়। ‘মানুষ কী করে খুব সরলভাবে তার অনেকগুলো খরচের হিসাবের জন্য মনে মনে একাধিক অ্যাকাউন্টের হিসাব কষে’ এই গবেষণার জন্য নোবেলের স্বীকৃতি পেলেন থেলার। ৭২ বছর বয়সী  থেলার বর্তমানে ‘ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো বুথ স্কুল অব বিজনেস’-এর ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও অর্থনীতির অধ্যাপক। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অন্যতম বিচারক পার স্ট্রয়েমবার্গ বলেন, অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তকে মানব মনস্তত্ত্বের সুনির্দিষ্ট কোনদিকে রূপ দেয় সেটি উন্মোচিত করেছে তার কাজ। ‘গবেষকরায় রিচার্ড থেলার যা পেয়েছেন তা অন্য অনেক গবেষককে তার পদাঙ্ক অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এটা অর্থনীতির একটি নতুন ক্ষেত্রের ভিত্তি দিয়েছে, যাকে আমরা আচরণগত অর্থনীতি বলি।’ এ অর্থনীতিবিদের লেখা ‘নাজ’ নামের বইটি বোদ্ধা ও সাধারণ পাঠক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক সমাদৃত হয়। বইটিতেই তিনি অর্থনীতির একটি বিশেষ নিয়ন্ত্রক উপাদান হিসেবে ‘নাজিং’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘আলতো ছোঁয়া’। তিনি মূলত দেখাতে চেয়েছেন, সাধারণ মানুষ তাদের আচরণের মাধ্যমে কীভাবে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। তার মতে, সাধারণ মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারলে অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তার এ মতবাদে পরবর্তী সময়ে অনেক গবেষক উদ্দীপ্ত হন। সময়ের সঙ্গে এ মতবাদ এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে, ২০১০ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন একটি নাজ ইউনিট স্থাপন করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের আচরণ পরিবর্তনের উদ্ভাবনী কৌশল খুঁজে বের করা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষ কীভাবে বাজে পছন্দটাই বেছে নেয় আমেরিকান আইন বিশেষজ্ঞ কাস সানস্টেইনের সঙ্গে যৌথভাবে লেখা বেস্ট সেলার বই ‘নাজ’ এ তা দেখিয়েছেন থেলার। নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার পর পুরস্কারের অর্থ নিয়ে রসিকতা করে অর্থনীতিবিদ থেলার বলেন, ?‘আমি এই অর্থ যতদূর যথেচ্ছভাবে সম্ভব, সেভাবেই খরচের চেষ্টা করব।’ তিনি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে, গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষ সামগ্রিক ফলাফলের বদলে পৃথক পৃথক ক্ষেত্রের আংশিক ফলাফলকে গুরুত্ব দেয় বেশি। একই পন্থায় কোনো বস্তুর প্রতি মানুষের বেশি যত্নবান হওয়ার বিষয়টিকেও ব্যাখ্যা করা যায়। এক্ষেত্রেও সামগ্রিক চিন্তা না থাকায়, মানুষ নিজের না হলে সাধারণত কোনো বস্তুর প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হয় না। মানুষের বুদ্ধিগত সীমাবদ্ধতার বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে আর্থিক বাজারে।

তিনি তার লেখায় সামাজিক অভিরুচির ক্ষেত্রে হাজির করেন ‘ন্যায্যতা’র প্রসঙ্গ। পরীক্ষা ও তত্ত্বের মাধ্যমে তিনি দেখান, উচ্চ চাহিদার সময়ে ভোক্তাদের ন্যায্যতা বিষয়ে সচেতনতা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময় আবার এ সচেতনতা ও এর প্রভাবটি কাজ করে না। তার তৃতীয় নিয়ামক ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের ঘাটতি’ অনেক পুরনো একটি বিষয় হলেও বাজার ব্যবস্থায় এর প্রভাব বিচারের জন্য তিনি এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানে বহুল ব্যবহৃত ‘প্ল্যানার-ডুয়ার’ পদ্ধতিটি ব্যবহার করেন। একই সঙ্গে তিনি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও চটজলদি রূপায়ণের মধ্যে বিদ্যমান অন্তর্গত বিরোধের ওপরও আলোকপাত করেন। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ৯০ লাখ ক্রোনা বা ১১ লাখ ডলার পাবেন। এবারের নোবেল পুরস্কারে আমেরিকানদের জয়জয়কার। চিকিৎসা ও পদার্থবিজ্ঞানে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়ে ছয়জন মার্কিন বিজ্ঞানী নোবেল জিতে নেন। রসায়ন বিজ্ঞানে এ বছরের নোবেল বিজয়ী তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন মার্কিন। মাঝে শান্তি ও সাহিত্যে কোনো মার্কিনের নাম শোনা না গেলেও অর্থনীতিতে আবারও এক মার্কিনকেই বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি। বিবিসি, এএফপি

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর