বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
মানবতাবিরোধী অপরাধ

সেই ঘোড়ামারা আজিজসহ ফাঁসি ছয়জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য আবু সালেহ মুহাম্মদ আবদুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ গাইবান্ধার ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়।

১ নম্বর অভিযোগে আসামিদের আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ২ ও ৩ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজিজ বর্তমানে পলাতক। অন্য আসামিরা হলেন— মো. রুহুল আমিন মঞ্জু, মো. আবদুল লতিফ, আবু মুসলিম  মোহাম্মদ আলী, মো. নাজমুল হুদা ও মো. আবদুর রহিম মিঞা। আসামিদের মধ্যে আবদুল লতিফ গ্রেফতার, বাকিরা পলাতক।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী ও ছায়েদুল হক সুমন এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও গ্রেফতার লতিফের পক্ষে ছিলেন খন্দকার রেজাউল আলম। দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৩ অক্টোবর থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। তিনটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর গাইবান্ধা সদরের মৌজামালিতে লুটপাট, আটক, অপহরণ ও নির্যাতন এবং পরে দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে একজনকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় আসামিদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। দ্বিতীয় অভিযোগে সুন্দরগঞ্জ থেকে ছাত্রলীগ নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে ধরে মাঠেরহাট রাজাকার ক্যাম্প এবং থানা সদরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন এবং গুলি করে হত্যার পর লাশ মাটিচাপা দেওয়ার দায়ে সব আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় অভিযোগে সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে আটক করে নির্যাতন এবং নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যার দায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ের পর প্রসিকিউটর ছায়েদুল হক সুমন বলেন, আমরা সন্তুষ্ট। ন্যায়বিচার পেয়েছি। প্রসিকিউশন এ মামলায় যেসব সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে না। ২০০১ ও ২০০৭ সালের যেসব দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। পলাতক আসামিরা আত্মসমর্পণ করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে খালাস পাবেন বলে আশা করি। আসামি লতিফের আইনজীবী রেজাউল আলম বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। ২০০৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জের পাঁচগাছী শান্তিরাম গ্রামের মৃত আলম উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমান সরকার বাদী হয়ে জামায়াত নেতা আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আজিজার রহমানের বড় ভাই ফয়েজ উদ্দিনকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগে ওই মামলাটি করা হয়। অপরদিকে ধর্মপুর গ্রামের আকবর আলীকে হত্যার অভিযোগে জামায়াত নেতা আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন আনিছুর রহমান। বাকিদের মধ্যে জামায়াতের সুন্দরগঞ্জ শাখার সক্রিয় সদস্য রুহুল আমিন মঞ্জুও একাত্তরে গাইবান্ধায় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন এবং পরে নিজেও যুদ্ধাপরাধে অংশ নেন। পরে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুটি মামলা হয়। একাত্তরে আবদুল আজিজের হাত দিয়েই গাইবান্ধায় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। মো. আবদুল লতিফ ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের নেতা। তার বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগসহ তিনটি মামলা হয়। আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী মুক্তিযুদ্ধের আগে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় নেতা ছিলেন। পরে জামায়াতে ইসলামীতে সক্রিয় হন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধে জড়ান। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পরে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। ১৯৭০ সাল থেকে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়। ১৯৯৫ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আবদুর রহিম মিঞা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের কর্মী ছিলেন এবং ওই সময় বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা হয়। এই আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত সংস্থা ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। গত বছরের ২৮ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।

সর্বশেষ খবর