শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাবি অধ্যাপককে পেটালেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

মর্তুজা নুর, রাবি

এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে ধাক্কা লাগার জেরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের এক শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। বুধবার গভীর রাতে রামেক হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, মারধরের শিকার শিক্ষক ড. এ টি এম এনামুল জহির আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি তার মেয়েকে দেখতে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক পিংকির সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। এতে ওই নারী চিকিৎসক তাকে গালাগালি শুরু করলে এনামুল জহির তাকে ‘ননসেন্স’ বলে মন্তব্য করেন। পরে পিংকি মোবাইল ফোনে বিষয়টি আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক কামালকে জানান। তখন কামাল কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে নিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে যান এবং সেখানে তারা এনামুল জহিরকে বেধড়ক মারধর করেন। রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) গোলাম মোস্তফা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। ইন্টার্ন চিকিৎসক পিংকি দাবি করেন, ‘আমরা কয়েকজন ওটি (অপারেশন থিয়েটার) থেকে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় ওই শিক্ষকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। আমি উনাকে বলি, আপনি দেখে চলবেন না! তখন তিনি আমাকে ননসেন্স বলেন। আমি বলি, আপনি কী বললেন! তখন তিনি আবারও আমাকে ননসেন্স বলে গালি দেন। তখন আমার বন্ধুরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন এবং সরি বলতে বলেন। এ সময় তিনি আইনের অধ্যাপক বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে সরি বলতে অস্বীকৃতি জানান।’

এদিকে শিক্ষক মারধরে জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাস্তির দাবিতে সকালে ক্যাম্পাসে মিছিল করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় মারধরের শিকার শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাতে প্রধান ফটকে গেলে শিক্ষকের শারীরিক অবস্থা দেখে শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুপুর পৌনে ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার নেতৃত্বে আইন বিভাগের শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে আসেন। উপ-উপাচার্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তারা প্রশাসন ভবনের সামনে এসে ফটকে তালা লাগিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। মারধরের বিষয়ে কথা বলার জন্য এনামুল জহিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরও চিকিৎসকরা স্যারের কোনো কথা শোনেননি; বেধড়ক মারধর করেছেন। তারা স্যার ও তার মেয়ের কোনো চিকিৎসাও করেননি। রাস্তায় কুপিয়ে শিক্ষককে মারা হবে, হাসপাতালে গেলে মারধর করা হবে— এসব আমরা মেনে নেব না।’ পিতৃতুল্য শিক্ষককে মারধরকারীদের বহিষ্কার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এদিকে শিক্ষক মারধরের ঘটনায় দুপুরে জরুরি বৈঠকে মিলিত হন রাবির আইন বিভাগের শিক্ষকরা। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান বলেন, ‘বৈঠকে রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে সহকর্মী এনামুল জহির লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আমরা তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমবেদনা জানিয়েছি। আহত শিক্ষকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ এ ছাড়া অধ্যাপক মারধরের ঘটনায় রাজশাহী চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কুদরত-ই-খুদা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শিবলী ইসলাম জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর