মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ফের মৃত্যু মিছিল

ইফতারসামগ্রী নিতে গিয়ে পদদলনে গেল ১০ প্রাণ আহত ২০

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে ফের মৃত্যু মিছিল

স্বজনদের আহাজারি

চট্টগ্রামে এবার ইফতারসামগ্রী আনতে গিয়ে পদদলনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন— রাশিদা আক্তার (৫৪), জোছনা বেগম (২৫), সাকি আক্তার (২২), হাছিনা আক্তার, রিনা বেগম, ফাতেমা বেগম  টুনটুনি (১৫), নুর আয়েশা (৬০), নুরজাহান (১৮), আনোয়ারা বেগম (৬০) ও অজ্ঞাত নারী (৩৫)। গতকাল সকালে জেলার সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের কাদেরিয়া মুঈনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার হেফজখানা ও এতিমখানার মাঠে কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (কেএসআরএম) মালিকের ইফতারিসামগ্রী বিতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও ২০০৫ সালের অক্টোবরে একই এলাকায় একই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক শাহজাহানের জাকাত বিতরণের সময় পদদলনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নয়জন নিহত ও ৫০ জন আহত হন। ইফতারিসামগ্রী বিতরণের জন্য এত বড় আয়োজন করা হলেও তা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত না করার অভিযোগ উঠেছে কেএসআরএম গ্রুপের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের দাবি— আগে থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হলে হয়তো এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. এম এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তারা হাজার হাজার মানুষকে ইফতারি ও জাকাতসামগ্রী বিতরণ করছে, অথচ তা স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেনি। এ আয়োজনে আয়োজকদের কোনো গাফিলতি রয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কারও দোষ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ হুড়াহুড়ি করে প্রবেশ ও গেট ছোট হওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা হয়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে এত বড় আয়োজন করা ঠিক হয়নি। বিষয়টা তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কেএসআরএমের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও ছোলা, সেমাই, চিনি, পিয়াজের মতো বিভিন্ন পণ্য মিলিয়ে ২০ হাজার মানুষের জন্য প্যাকেট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু আশপাশের গ্রামের লোকজন চলে আসায় ভিড় বেড়ে গেছে। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টা অবহিত করেছিলাম। তার পরও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’ জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবার রমজান উপলক্ষে গরিবদের ইফতারিসামগ্রী দেওয়ার আয়োজন করেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। এবারও তারা ২০ হাজার মানুষের মাঝে ইফতারিসামগ্রী বিতরণের ঘোষণা দেন। খবর পেয়ে রবিবার রাত থেকেই দূরদূরান্ত থেকে গরিব ও ভিক্ষুকরা হাজির হতে থাকে নলুয়ার ঘাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের কাদেরিয়া মুঈনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা এলাকায়। গতকাল সকাল হওয়ার আগেই প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জড় হয়। ইফতারিসামগ্রী নিতে আসাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন দুস্থ নারী ও শিশু। সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ ভিড় ও হুড়াহুড়ি বেড়ে যায়। এ সময় গেট ভেঙে মাঠে প্রবেশ করতে গিয়ে পদদলিত হয়েছে ঘটনাস্থলেই ১০ জন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। আমাদের সাতকানিয়া প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ জানান, গতকাল ভোররাতেই কানায় কানায় ভরে যায় কাদেরিয়া মুঈনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার মাঠ। একপর্যায়ে অস্থায়ী গেট ভেঙে যায়। এ সময় হুড়াহুড়ি করে প্রবেশ করতে গিয়ে পদদলনের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই আটজনের লাশ পাওয়া যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় কমপক্ষে ২০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) এ কে এম এমরান হোসেন ভুইয়া বলেন, ‘যে মাঠে ইফতারিসামগ্রী দেওয়া হচ্ছিল তার ধারণাক্ষমতা ১০ হাজারের হলেও তাতে উপস্থিত হন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। মানুষের অতিভিড়ের কারণে চাপাচাপি ও শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। এ ঘটনায় মারা যান ১০ জন নারী।’ তদন্ত কমিটি গঠন : সাতকানিয়ায় পদদলনের ঘটনা তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। হতাহতদের আর্থিক সাহায্য : ইফতারিসামগ্রী বিতরণের সময় চাপাচাপিতে নিহতদের আত্মীয়স্বজন ও আহতদের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে কেএসআরএম গ্রুপ।

গতকারের ঘটনার পর এই গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে দাফনকার্য সম্পাদনের জন্য তত্ক্ষণাৎ ১০ হাজার টাকা এবং পরে প্রত্যেক পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আহতদের চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেএসআরএম গ্রুপের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মিজবাহ উদ্দিন আহমদ।

সর্বশেষ খবর