শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
সরকারি গাড়ি তাই

বৈধ কাগজপত্রের প্রয়োজন মনে করেন না তারা

নিজামুল হক বিপুল

সরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের গাড়ি এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই। নেই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সও। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা মন্ত্রী-এমপিরাই নয়, আইন যারা প্রয়োগ করে সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও যানবাহনের কাগজপত্র নেই। কিন্তু সরকারি যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র যে কেন নেই— সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না বিআরটিএ কর্মকর্তারা পর্যন্ত।

রাজধানীতে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুর ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী কর্তৃক গাড়ির কাগজপত্র এবং চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স তল্লাশির সময়ই দেখা গেছে, সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের গাড়ির বৈধ কাগজপত্র নেই। চালকের লাইসেন্স নেই। এমনকি সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের গাড়ির কাগজপত্র নেই, লাইসেন্স নেই। পুলিশের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা এবং বিচারকদের গাড়িরও কাগজপত্র নেই। চালকের লাইসেন্স নেই। কিন্তু কেন সরকারি দফতরের গাড়ির কাগজপত্র নেই বা থাকে না— সে বিষয়টি খোদ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কর্মকর্তারাই বুঝে উঠতে পারছেন না।

গত সপ্তাহে দেশব্যাপী ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় দেখা গেছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংসদে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে ও বের হতে পারেননি সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও এমপি। এমনকি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকই বাতিল করতে হয় সদস্যরা উপস্থিত হতে না পারায়। কারণ কমিটির অনেক সদস্যের গাড়ির বৈধ কাগজপত্র এবং চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের ড্রাইভারের লাইসেন্স ছিল না। যার ফলে তাকে হেঁটে সংসদে প্রবেশ করতে হয়। ওই সময় শিক্ষার্থীরা নগরীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে তল্লাশি চালিয়ে সরকারি বহু দফতরের গাড়ির কাগজপত্র পায়নি।

বিব্রত অবস্থায় পড়েছিলেন সরকারের আরেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাকে ছাত্ররা রাস্তায় আটকে দিয়েছিল চালকের লাইসেন্স না থাকায়। শেষ পর্যন্ত ভিন্ন একটি গাড়িতে করে নিজের দফতরে যান।

গত কয়েকদিনে সরকারের বিভিন্ন দফতরের বহুসংখ্যক যানবাহন যাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই তারা বিআরটিএ-এর বিভিন্ন দফতরে গিয়ে নতুন করে কাগজ তৈরি করেছেন। এমন তথ্য দিয়ে বিআরটিএ একাধিক কর্মকর্তা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা নিজেরা বুঝে উঠতে পারছি না কেন সরকারি দফতরের যানবাহনের কাগজপত্র করা হয় না। হয়তো সরকারি দফতরের কর্মকর্তাদের ধারণা সরকারি কাগজ প্রয়োজন হয় না। কর্মকর্তারা বলেন, গত কয়েক দিনে আমরা টের পাচ্ছি সরকারের বহু দফতরের গাড়ি হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কাগজ করার জন্য।

এক কর্মকর্তা বলেন, আমার ধারণা সরকারি দফতরের গাড়ির কাগজপত্র করতে গেলে নানা রকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অতিক্রম করতে হয়। এ কারণে হয়তো অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের যানবাহনের কাগজপত্র করতে চায়নি বা করেনি। কিন্তু এটা অন্যায় এবং সরকারের আর্থিক লোকসানও বটে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, সরকারি দফতরের যানবাহন, পুলিশের যানবাহন এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মন্ত্রী-এমপিদের যানাবহন এতদিন রাস্তায় এনফোর্সমেন্টের শিকার হয়নি। এ কারণেই হয়তো কেউ যানবাহনের কাগজ নিয়ে ভাবেনি, গাড়ির কাগজ করেনি। তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতিটি সরকারি দফতরের যানবাহনকে অবশ্যই বৈধ কাগজপত্র নিয়েই রাস্তায় নামতে হবে। না হলে গাড়ি সড়কে চলতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, বৈধ কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স ছাড়া কোনো যানবাহনই চলতে পারবে না।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানান, এখন বিআরটিএ চারজন ম্যাজিস্ট্রেট রাজধানীর সড়কে কাজ করছেন। আমরা আরও ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। ১০ জন হলে আমরা জোরালোভাবে অভিযান চালাতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিআরটিএ খোলা রাখছি। যানবাহনের কাগজ করতে এখন সারাক্ষণ ভিড় লেগে আছে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের যানবাহনই এখন তাদের গাড়ির কাগজ করছে। যা আগে কখনই করেনি তারা কাগজ করে নিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর