রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংকট সমাধানে সংলাপ হতে হবে : ফখরুল

সংকট সমাধানে সংলাপ হতে হবে : ফখরুল

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকারকে বিএনপির সঙ্গেই সংলাপ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বিএনপি এ দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। আমরা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে বিশ্বাস করি। স্বৈরাচারী শাসনে আমরা বিশ্বাস করি না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যন্ত বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী। সুতরাং তারা যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দেশের সংকট নিরসন চাইবে না তা পরিষ্কার। স্বৈরাচারী চরিত্র থেকেই প্রধানমন্ত্রী সংলাপকে নাকচ করে দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই আলাপ-আলোচনায় জাতীয় সমস্যা সমাধান করে। তাই চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিএনপির সঙ্গেই সরকারকে সংলাপ করতে হবে। গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। আলাপচারিতায় চলমান রাজনীতি, দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়া নির্বাচনে যাবেন কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। তবে নির্বাচনের আগেই বেগম জিয়ার মুক্তি প্রশ্ন আসবেই। কারণ, এ দেশের গণতন্ত্রে তারই সবচেয়ে বেশি অবদান। তাই আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, পরে নির্বাচন। তার নেতৃত্বেই আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। কথা প্রসঙ্গে সম্প্রতি নয়াপল্টনে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জনসভায় ব্যাপক লোক সমাগমের বিষয়টি স্মরণ করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। নয়াপল্টনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশাল জনসভাই তা প্রমাণিত হয়েছে। বিমসটেক সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে বিএনপির এই শীর্ষ পর্যায়ের নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল গতানুগতিক। নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও তারা একই কথা বলেছিলেন। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী নতুন কিছু আশাবাদের কথা শুনাবেন। মনে রাখতে হবে, আমরা যে দাবিগুলো করছি তা শুধু একটি নিছক কোনো রাজনৈতিক দলের দাবি নয়। এ দাবি গোটা দেশের মানুষের। দেশের সব মানুষই একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা ছিল, তিনি মানুষের মনের কথাগুলো বুঝবেন, অনুধাবন করবেন। জনগণের সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করবেন। কিন্তু তিনি কোনো সমস্যার সমাধান দেননি। বরং সমস্যাগুলো জিইয়ে রেখেছেন। এর দায়দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারকেই নিতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নির্ভর করবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার ওপর-প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই বলা হয়। আর এ মামলাটি করাই হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে। হাই কোর্ট থেকে জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগে আসতে সময় নেয় সরকার। সেখান থেকেও আটকে দেওয়া হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে আপিল শেষ করার জন্য হাই কোর্ট থেকে একটি সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটা পরিষ্কার যে, সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করার জন্য সব রকম পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিয়ে সংকট থেকেই যাচ্ছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ সংকট নিরসন করতে চায় না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না—এটা তারা বুঝে গেছে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাব না। আইনগতভাবেই তাকে মুক্তি দিতে হবে। বেআইনিভাবে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। যে অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছে তা ‘ডাহা মিথ্যা’। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি বলেন, সারা দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে। এগুলোও প্রত্যাহার করতে হবে। গত কয়েকদিনে আবারও শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অতীতে তিনটা জাতীয় নির্বাচন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আজকে একটি একদলীয় সরকার ব্যবস্থা জবরদস্তিমূলক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যতগুলো সিটি নির্বাচন হয়েছে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ভোটিং পদ্ধতি থেকে জনগণকে দূরে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপি কী করবে এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের তিনবারের শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, গণতন্ত্রেরও নেত্রী। এ দেশের গণতন্ত্রে তারই সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে। সুতরাং তার মুক্তির প্রশ্নই সবার আগে আসবে। তাকে মুক্ত করেই নির্বাচনের কথা ভাবা হবে। আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তির সম্ভাবনা খুবই কম। তাই রাজপথের গণতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারামুক্ত করা হবে। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। এটা এখন কোনো পর্যায়ে। জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল পৃথক পৃথকভাবে ঐক্য করেছে। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজও শুরু করছেন। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় খুব শিগরিরই জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হবে। জাতীয় ঐক্য গড়তে গিয়ে ২০ দলের সঙ্গে কোনো বিভেদের সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে  তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে কথা বলেই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের উৎসাহ আমাদের চেয়েও বেশি। এ নিয়ে কোনো বিভেদ নেই। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলের নির্বাচন প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। আমাদের দলে প্রার্থীর অভাব নেই। প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী রয়েছে। স্থায়ী কমিটি শুধু একক প্রার্থী নির্ধারণ করে দেবে। শরিকদের কতটি আসন দেওয়া হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসন বণ্টনের ব্যাপারে এখনো স্পষ্ট করে বলার সময় আসেনি। কারণ, নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টিই এখন সুরাহা হয়নি। বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের বিজয়ী করার জন্য যদি নির্বাচন হয়, তাহলে এটাকে নির্বাচন বলা যাবে না। গতবারও ১৫৪ জনকে বিনা ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে যদি নির্বাচন করতে চায় তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। দলের ইশতেহার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সময়মতো নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ইশতেহার দেওয়া হয়। নির্বাচনে গেলে আমরাও সময়মতো ইশতেহার ঘোষণা করব। ইশতেহারে কি থাকছে তা এখনই বলা যাবে না। তবে ভিশন-২০৩৯ ধরেই ইশতেহার তৈরি করা হবে। একজন প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনের মাধুরী মিশিয়ে সুখ-দুঃখের অনেক কথা বলেন। ছড়া বানিয়ে বলেন। আমাদের জাতীয় নেতাদের নিয়েও নানা কথা বলেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে একটি আইডল ভাবতে চাই। তার কথাবার্তা, বাচনভঙ্গি যেন সবাই অনুকরণ করেন। ভবিষ্যতে কোনো আশার আলো দেখছেন কি না জানতে চাইলে মির্জা আলমগীর বলেন, আমি সব সময় আশাবাদী মানুষ।

সর্বশেষ খবর