বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা বিএনপির

নিরপেক্ষ প্রধানমন্ত্রী । থাকবেন ১০ উপদেষ্টা । জামায়াতকে না

মাহমুদ আজহার

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরি করেছে বিএনপি। সংবিধানের আলোকে খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে রূপরেখা। দলের স্থায়ী কমিটির কয়েক দফা বৈঠকে এ রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে দলের বেশ কয়েকজন আমলা ও বুদ্ধিজীবী নেতা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের হাতে তুলে দেন। রূপরেখাকে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পরিষদ নিয়োগের ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। তবে জামায়াতকে পরোক্ষভাবে ‘না’ করে দিয়েছে দলটি। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, সংবিধানের মধ্য থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। জানা যায়, রূপরেখায় নির্বাচনকালীন একজন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ১০ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমেই ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। তবে ওই নির্বাচনকালীন প্রধানমন্ত্রী বা উপদেষ্টা হওয়ার জন্য কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তারা সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচন করতে পারবেন না। কোনো রাজনৈতিক দল বা অঙ্গ সংগঠনে যুক্ত থাকতে পারবেন না। তারা যেহেতু মন্ত্রী পদমর্যাদার তাই শপথের প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। সময়মতো আমরা এ রূপরেখা ঘোষণা করব।’

সূত্রমতে, রূপরেখার প্রথম দফায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক উন্মুক্ত আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ের আলোকে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিগণকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য লিখিত পরামর্শ দেবেন এবং রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেবেন। সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন এবং তার পদত্যাগের পরপরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত বিবেচিত হবে। অথবা সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে মেয়াদপূর্তির আগেই রাষ্ট্রপতি দশম সংসদ ভেঙে দেবেন। সংবিধানের ৫৭(১)(খ)৫৮(৪) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন এবং তার পদত্যাগের পরপরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত বিবেচিত হবে। তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ না করে সংবিধানের ৪৮(৩)  অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন প্রধানমন্ত্রী ও একজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একক সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।

চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৬(২) এর প্রভিসো (চত্ড়ারংড়) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ এক-দশমাংশ মন্ত্রী অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে মনোনীত হতে পারবেন। তবে তাকে অবশ্যই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। সংবিধানের এই বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সবার নিকট আস্থাভাজন একজন বিশিষ্ট নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা এর অঙ্গ সংগঠনের সদস্য বা সম্পৃক্ত নন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নন কিংবা প্রার্থী হবেন না এমন একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।

উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা এর অঙ্গ সংগঠনের সদস্য বা সম্পৃক্ত নন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নন কিংবা প্রার্থী হবেন না এমন একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। তারা যেহেতু মন্ত্রী থাকবেন না তাই তাদের শপথ গ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং অপর ১০ জন উপদেষ্টা সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ ব্যক্তি হবেন এমনটা উল্লেখ করে খসড়া প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের মাধ্যমে ’৯০-এর মতো গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করবেন। ঐকমত্যের ভিত্তিতে মনোনীত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা গঠন না করে, একটি উপদেষ্টামণ্ডলীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। এই উপদেষ্টামণ্ডলী সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে মনোনীত হবেন। তারা যেহেতু মন্ত্রী থাকবেন না, তাই তাদের শপথ গ্রহণের প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, বর্তমান সংবিধানের আওতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার পাশাপাশি একটি উপদেষ্টামণ্ডলীও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর