রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রান পাহাড়ের পর স্পিনারদের তাণ্ডব

আসিফ ইকবাল

রান পাহাড়ের পর স্পিনারদের তাণ্ডব

শতক হাঁকানোর পর গতকাল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উচ্ছ্বাস —রোহেত রাজীব

সময়ের ব্যবধান মাত্র পাঁচ মাস। এই সময়ের হেরেফেরে ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখলেন হাসি কান্নায় মেশানো ভিন্ন দুই চিত্র! জুলাইয়ে ক্যারিবীয় দর্শকরা হেসে লুটোপুটি খেয়েছিলেন টাইগার ব্যাটসম্যানদের হাঁসফাঁস ব্যাটিং দেখে। সময়ের আশ্চর্য ফোরনে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশের দর্শকেরা উত্ফুল্ল হয়েছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস ব্যাটিংয়ে। মধুর প্রতিশোধ বোধহয় এতটাই নির্মম! প্রতিশোধের এই টেস্ট সিরিজে গতকাল বাংলাদেশের স্পিনাররা টুঁটি চেপে ধরেছেন সফরকারী ব্যাটসম্যানদের। দিনের শুরুতে সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও লিটন দাসের আগ্রাসী ব্যাটিং খাদের কিনারায় ঠেলে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শেষ সেসনে সাকিব ও মিরাজের স্পিন ফনার ছোবলে মরণদশায় পড়েছেন ব্রেথহোয়েইট, আমব্রিস, পাওয়েল ও শাই হোপরা। মাহমুদুল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা ১৩৬, সাকিবের অধিনায়কোচিত ৮০, সাদমানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেওয়া ৭৬ ও লিটনের ঝড়ো গতির ৫৪ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫০৮। প্রতি উত্তরে সাকিব ও মিরাজের ঘূর্ণির বিভ্রমে ৭৫ রানে ৫ উইকেট খুঁইয়ে আইসিউএতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ তৃতীয়দিন বাকি ৫ উইকেট নিয়ে ৪৩৩ রানে পিছিয়ে ব্যাটিংয়ে নামবে সফরকারীরা।       

প্রথম দিনটি নিজের করে নেন অভিষিক্ত ওপেনার সাদমান ইসলাম ৭৬ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস খেলে। দ্বিতীয় দিন নিজেদের মধ্যে ভাগ করেন নেন মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, লিটন ও মিরাজ। ৫ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে কাল আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং করেন সাকিব। আগের দিন বাউন্ডারি মেরেছিলেন মাত্র একটি। গতকাল আরও ২৫ রান যোগ করে সাজঘরে ফিরেন ৮০ রানের জ্বলজ্বলে ইনিংস খেলে। ৬ বাউন্ডারির পাঁচটিই মেরেছেন গতকাল। হঠাৎ সুযোগ পাওয়া লিটন ৫৪ রান করেন ৬২ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায়। সবাইকে পেছনে ফেলে মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ। ২৪২ বলে ১৩৬ রানের ইনিংসটি মাহমুদুল্লাহর ৪৩ টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। ধ্রুপদী ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি ২০১০ সালে। দ্বিতীয়টি পেতে অপেক্ষায় ছিলেন দীর্ঘ ৮ বছর। করেছেন ১৪ নভেম্বর ২০১৮ সালে। তৃতীয়টি করেছেন মাত্র এক টেস্টের ব্যবধানে। সব মিলিয়ে ৭ নম্বরে সেঞ্চুরি হাঁকানো তৃতীয় ব্যাটসম্যান মাহামুদুল্লাহ। ৭ নম্বরে এর আগে সেঞ্চুরি করেছেন নাসির হোসেন ও মুশফিকুর রহিম। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলতে অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে ৬ নম্বর জুটিতে ১১১ রান ও সপ্তম জুটিতে লিটনের সঙ্গে ৯২ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ। এক সেঞ্চুরি ও তিন হাফসেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫০৮। সব মিলিয়ে ১১২ টেস্টে পাঁচশোর্ধ্ব ইনিংস এটা নবম। মাহমুদল্লাহদের সাবলীল ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছিল ক্যারিবীয়দের। টাইগারদের ব্যাটিংয়ে উইকেটের আচরণ কখনোই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। অথচ ব্যাটিংয়ে নেমেই নাভিশ্বাস উঠেছে সফরকারীদের। ম্যাচের প্র্রথম ওভারেই আঘাত হানেন সাকিব। আর্ম বলে শূন্য রানে সাজঘরে পাঠান ব্রেথহোয়েইটকে। সেই শুরু। এরপর ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে, নবম ওভারের শেষ বলে, ১০ম ওভারের তৃতীয় বলে এবং ১২ নম্বর ওভারের শেষ বলে ২৯ রানের মধ্যে ক্যারিবীয় ইনিংসের অর্ধেক লেজ কেটে দেন সাকিব ও মিরাজ। আশ্চর্য হলেও সবগুলো আউটই ছিল বোল্ড। আজ তৃতীয়দিন নতুন উদ্যমে নেমে সফরকারীদের কখন থামিয়ে দিবেন সাকিবরা, সেটাই দেখার বিষয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর