রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফেরদৌস নূরের প্রচারণা নিয়ে মুখ খুললেন মোদি

কেরালায় প্রিয়াঙ্কা ঝড়

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি ও দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ফেরদৌস নূরের প্রচারণা নিয়ে মুখ খুললেন মোদি

দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে গতকাল নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে ঝড় তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সেখানে বক্তৃতাকালে তিনি বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, মোদি ২০১৪ সালে যেসব ওয়াদা করেছিলেন তার কোনোটিই পূরণ করেননি। উপরন্তু তিনি সাম্প্রদায়িক সদভাবনা বিনষ্ট করেছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি গতকাল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরে এক জনসভায় বলেন, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি তোষণের রাজনীতি করতে গিয়ে বিদেশিদের এনে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা এক লজ্জাজনক ব্যাপার।

আগামী মঙ্গলবার ভারতের ১৩টি রাজ্যের ১১৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। এতে করে তিনটি ধাপে লোকসভার মোট আসনের দুই-তৃতীয়াংশ আসন- ৩১০টি আসনে ভোট  হয়ে যাবে। মঙ্গলবার যেসব রাজ্যে নির্বাচন হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে কেরালা। এখানে ওয়েনাড় আসনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এই প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উত্তর ভারতে কংগ্রেস সংগঠন শক্তিশালী না হলেও দক্ষিণ ভারতে এখনো ইন্দিরা গান্ধী-রাজীব গান্ধীর প্রভাব রয়েছে। তাই সবকটি আসনে জোর লড়াই করতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী উত্তর ভারত ছেড়ে গতকাল দক্ষিণ ভারতে এলেন। এখানকার জনসভায় তিনি রাহুলকে কার্যত ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমার ভাই জয়ী হলে রাজীব গান্ধীর স্বপ্ন পূরণ করবে। তাকে আমি জন্ম থেকে চিনি। অথচ গত দশ বছর ধরে বিজেপি তার নামে কি অপমানই করেছে। এর জবাব আপনারা ব্যালটে দিন।’ গতকালই আমেথির এক নির্দলীয় প্রার্থী রাহুলের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার অভিযোগ, রাহুল আদতে ব্রিটিশ নাগরিক। এই কারণে গতকাল জেলা রিটার্নিং অফিসার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছেন ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। বিজেপি এই ধরনের অভিযোগ আগেও এনেছিল বলে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা জানান। সেই অভিযোগ আদালত খারিজ করে দেয়। কেরালার পাহাড়ে ঘেরা ওয়েনাড় আসনটি রাহুলের বেছে নেওয়ার কারণÑ এলাকাটি তিনটি প্রদেশের সংগমস্থল। একদিকে কর্ণাটক, অন্যদিকে তামিলনাড়ু আর কেরালা। এই কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ ভারতের তিনটি রাজ্যে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে জাতীয় কংগ্রেস। ভারতের সব সমীক্ষা কেরালার কুড়িটি আসনের বেশির ভাগ এবার কংগ্রেসের ঝোলায় যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। তাই এখানে প্রিয়াঙ্কাকেও কংগ্রেস নামিয়েছে। এখানে বক্তৃতাকালে প্রিয়াঙ্কা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, মোদি তার কোনো ওয়াদাই রক্ষা করেননি। উপরন্তু দেশের সাম্প্রদায়িক সদভাবনাকে নষ্ট করছেন। মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রেও ভোট নেওয়া হবে। গত লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে সব থেকে বেশি আসন পেয়েছিল বিজেপি। সেই আসন যদি ধরে রাখতে না পারে তাহলে লাভবান হবে কংগ্রেস। ফলে বাকি চারটি ধাপে লোকসভা ভোট হাড্ডাহাড্ডি হয়ে যাবে। আপাতত ফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মোদিকে বেপরোয়া হতে হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যায় যদি বাড়তি আসন তিনি না পান তাহলে দিল্লির তখত তাউস তার জন্য অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।

বিতর্ক থামছে না : ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশের দুই অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ ও গাজী আবদুন নূরের অংশ  নেওয়ায় সৃষ্ট বিতর্ক থামছে না।

এই ইস্যুতে বিজেপি, কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তোপের মুখে রেখেছে। আর এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে এই ইস্যুতে মমতাকে প্রবলভাবে আক্রমণ করে চলেছেন।

শনিবার দক্ষিণ দিনাজপুরে নির্বাচনী প্রচারণা সভায় বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে বিদেশি এনে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো লজ্জাজনক ব্যাপার।

জনসভায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, তোষণের রাজনীতির জন্য অন্য  দেশের মানুষদের ডেকে নিয়ে এসে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে লাগানো হচ্ছে। এটা খুবই লজ্জাজনক ঘটনা।’ তার প্রশ্ন ‘ভারতে কখনো কোনোদিন এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে? অন্য দেশের নাগরিক এনে ভারতের নির্বাচনে প্রচারণা করতে হয়েছে?’ মোদি বলেন, নিজেদের স্বার্থের জন্য, ভোটব্যাংকের জন্য,  তোষণের রাজনীতির জন্য মমতা যতটা নিচে নামার দরকার, উনি নামবেন। এই ধরনের মডেল দেশের জন্য তো নয়ই, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের জন্যও কাম্য নয়।’

মোদি আরও বলেন, ‘দেশের জন্য এমন উন্নয়নের মডেল চাই  যেখানে সবার সুরক্ষা ও সম্মান মেলে, এমন অগ্রগতির মডেল দরকার যেখানে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। এমন মডেল প্রয়োজন সেখানে সন্ত্রাসবাদীরা ভয় পাবে।’ 

ফেরদৌস ও গাজী নূরের বিরুদ্ধে ‘স্বদেশে ফিরে যাও’ নির্দেশনাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ভারতের ‘বাড়াবাড়ি’ বলে অভিহিত করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানান, ‘এটা আপনাদের বুঝতে হবে যে, যখন আপনি নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে ভিসার জন্য আবেদন করবেন, আপনাকে সেসব শর্ত মানতে হবে। ভারতের আইন-কানুনকে সম্মান জানাতে হবে। তাই নয় কি?’

দুই বাংলাদেশি অভিনেতাকে দিয়ে প্রচারণার বিষয়টি নিয়ে মমতা ব্যানার্জি একটি শব্দও খরচ না করা নিয়ে কিরেন রিজিজু বলেন, ‘যাই হোক না কেন, ভিসা নেওয়ার সময় ভ্রমণের উদ্দেশ্য জানাতে হয়। বাংলাদেশ ভারতের খুবই বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। বাংলাদেশ সরকার ও সে দেশের মানুষের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আছে। কিন্তু কেউ যদি ভিসা আইনের অপব্যবহার করেন-সেখানে কাউকে উৎসাহিত করা উচিত নয়।’

সর্বশেষ খবর