রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঋণখেলাপিদের সম্পদ জব্দে কঠোর আইন আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঋণখেলাপিদের সম্পদ জব্দে কঠোর আইন করা হচ্ছে। আইনে ঋণখেলাপিদের সম্পদ ক্রোকের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়া একই আইনের আওতায় প্রস্তাবিত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে খেলাপিদের সম্পদ জব্দ করে বিক্রির ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন যুগ্মসচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে ২১ মার্চ। ওই কমিটি কয়েক দফা সুপারিশসহ একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে। যা অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সারসংক্ষেপের সুপারিশে বলা হয়, ঋণখেলাপির সম্পদ ক্রোকের ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। এ জন্য একটি পৃথক আইন করা প্রয়োজন। অর্থঋণ আইন ও দেউলিয়া আইনে খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত যেসব ধারা রয়েছে সেগুলো অত্যন্ত দুর্বল। ফলে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সেসব আইন কাজে আসে না। ঋণখেলাপিরা খুব সহজেই কোর্টে রিট করে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আটকে দেন। ফলে ঋণের টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। কমিটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের জন্য এশিয়ার দেশগুলোর বিভিন্ন ব্যাংকিং ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে এমন সুপারিশ করেছে। বিশেষ করে ভারত, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে আমাদের দেশের মিল খুঁজে পেয়েছে কমিটি। খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তি করবে। চুক্তি অনুযায়ী, ব্যাংক যে খেলাপি ঋণগুলো আদায়ে ব্যর্থ হয় সেগুলো কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেবে। ট্রান্সফার করা খেলাপি ঋণগুলো আদায়ে ব্যবস্থা নেবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। কোম্পানিগুলো আদায়কৃত খেলাপি ঋণের ২০, ৩০ বা ৫০ শতাংশ অর্থ নিতে পারবে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে আরও বলেছে, সরকারি-বেসরকারি দুই ধরনের কোম্পানিই খেলাপি ঋণ আদায়ে কাজ করতে পারবে। তবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটি অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধিত হতে হবে। এ কোম্পানিকে বিশেষ ক্ষমতা দিতে একটি পৃথক আইন করার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিটি। আইনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিকিউরিজেশন অব নন পারফরমিং লোন’। কমিটির সুপারিশে বলা হয়, কোম্পানি যদি মনে করে কোনো গ্রাহক খেলাপিতে পরিণত হওয়া প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন করলে তা আবার সচল হবে এবং ঋণ পরিশোধ করতে পারবে তাহলে তা করতে পারবে। পাশাপাশি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পত্তি বিক্রির ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। প্রস্তাবিত আইনে ব্যাংকগুলোকেও বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ১২ ধারায় মামলা পূর্ববর্তী পর্যায়ে এবং ৩৩ ধারায় মামলার রায় হওয়ার পর নিলামের ব্যাপারে বলা আছে।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মামলার মধ্যবর্তী পর্যায়ে বন্ধকি সম্পত্তি নিলামের প্রয়োজন পড়ে। আইনে বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় তা করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো গ্রাহক অর্থঋণ মামলার অন্তর্বর্তী আদেশ বা তুচ্ছ অজুহাতে রিট মামলা দায়ের করেন। এতে ব্যাংকের ঋণ আদায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। এ জটিলতা কাটাতে মন্ত্রণালয় বলছে, একটি অর্থঋণ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কোনোভাবেই যেন একাধিক রিট মামলা দায়ের না করা যায় সেজন্য আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর