বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সবাইকে কাঁদিয়ে চির বিদায় জায়ানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সবাইকে কাঁদিয়ে চির বিদায় জায়ানের

সবাইকে কাঁদিয়ে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জায়ান চৌধুরী। সে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি। গতকাল বিকালে বাদ আসর বনানীর ক্লাব মাঠে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় তার নানা শেখ সেলিমসহ পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। রবিবার শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিহত আট বছরের জায়ানের মরদেহ বহনকারী শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের বিমান ইউএল-১৮৯ ফ্লাইটটি গতকাল দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের টারমার্কে নাতি জায়ানের মরদেহ গ্রহণ করেন নানা শেখ সেলিম। এ সময় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, শেখ হেলাল, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ পরিবারের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে জায়ানের মরদেহ শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় নেওয়া হয়। এ সময় ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের নাতিকে শেষবারের মতো দেখতে সেখানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে বনানীতে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বাসায় যান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বাসায় প্রবেশের পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। শেখ সেলিমসহ আত্মীয়-স্বজনরা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। শিশু জায়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও ছিল অনেক প্রিয়। প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেলেই শিশু জায়ান দাদু বলে জড়িয়ে ধরতেন। গতকালও আদরের জায়ানের সঙ্গে দেখা প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু আর তাকে দাদু বলে ডাকেননি, জড়িয়েও ধরেননি জায়ান। নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত জায়ানের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। পরে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত সেখান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জায়ানকে শেষবারের মতো দেখতে উপস্থিত হন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, শেখ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, শেখ হেলাল উদ্দিন, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমানসহ আরও অনেকে। সপরিবারে শ্রীলঙ্কা বেড়াতে গিয়ে রবিবার ভয়ঙ্কর বোমা হামলায় অন্য অনেকের সঙ্গে নিহত হয় শিশু জায়ান। এ ঘটনায় গুরুতর আহত তার বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সকে এখনই দেশে ফেরানো যাচ্ছে না। তিনি কলম্বোর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বামীর পাশে থাকায় ছেলের মরদেহের সঙ্গে দেশে ফেরা হয়নি জায়ানের মা এবং শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়ার। হামলার সময় হোটেল কক্ষে থাকায় বেঁচে গেছেন জায়ানের মা শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া ও ছোট ভাই দেড় বছর বয়সী জোহান চৌধুরী। জায়ান রাজধানীর উত্তরার সানবিম ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কেজি-২ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গতকাল বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে জায়ানের মরদেহ নিয়ে আসা হয় বনানীর ক্লাব মাঠে। এর আগ থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জানাজায় অংশ নিতে সর্বস্তরের মানুষ সেখানে হাজির হন। মরদেহ আনার পরপরই মাইক নিয়ে তার নানা শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, গত রবিবার শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় আমার নাতি জায়ান মারা যায়। আমরা শোকাহত ছিলাম। আপনারা সবাই, প্রিয় দেশবাসীও আমাদের সঙ্গে শোকাহত হয়েছেন। আপনারা আমাদের সমবেদনা জানিয়েছেন, সহমর্মিতা দেখিয়েছেন। আপনাদের সহমর্মিতায় আমাদের ব্যথা অনেক হালকা হয়েছে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শেখ সেলিম। এ সময় উপস্থিত অনেককেই চোখ মুছতে দেখা যায়। কিছুটা বিরতি দিয়ে শেখ সেলিম আরও বলেন, শিশু জায়ানের ভাগ্যটা অনেক ভালো। সে শহীদ হয়েছে। আজ থেকে ৪৪ বছর আগে ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সপরিবারের নিহত হন। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুকেই কেবল টুঙ্গিপাড়ায় নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৮ স্বজন ও পরিবারের সদস্যকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সেই ১৮ জনের সঙ্গেই ১৯তম শহীদ হিসেবে জায়ানকে দাফন করা হবে। একই সঙ্গে জায়ানের পিতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান শেখ সেলিম এবং আগামী শনিবার বনানীর এই মাঠেই কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। উপস্থিত সবাইকে কুলখানিতে অংশ নিতে অনুরোধ জানান তিনি। শেখ সেলিম আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন পুত্র হারানোর শোক দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে এবং তার স্বামী যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে  সেই দোয়া করবেন।  শিশু জায়ানের নামাজে জানাজার ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু, কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান সিরাজ, দেলেয়ার হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, হুইপ ইকবালুর রহিম, দলের জাতীয় কমিটির সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, আকবর খান পাঠান (নায়ক ফারুক) এমপি, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ব্যবসায়ী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা জানাজায় অংশ নেন। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জাতীয় পার্টি (জেপি)’র শেখ শহীদুল ইসলাম জানাজায় শরিক হন। পরে তাকে বনানীর কবরস্থানে ১৫ আগস্ট শহীদদের পাশে দাফন করা হয়।

সর্বশেষ খবর