বুধবার, ১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

কর্মস্থলে ঝুঁকি বেড়েছে

মাহবুব মমতাজী

কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি বেড়েছে শ্রমিকদের। এক জরিপে শ্রমিক আন্দোলন, কর্মস্থলে দুর্ঘটনা এবং নির্যাতনের ঘটনায় ঝুঁকির চিত্র ফুটে উঠেছে। গত বছর ৭৬৪ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হন। এর মধ্যে ২৭৯ জন খুন এবং ১৭০ জন নিখোঁজ। এ ছাড়া ন্যূনতম মজুরি নির্র্ধারণের দাবিতে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন হয়েছে পোশাক শিল্প খাতে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৯ সালে পরিবহন খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২৬। গত বছর এ সংখ্যা হয় ৪২৪। ২০০৯ সালে নির্মাণ খাতে নিহতের সংখ্যা ছিল ৫৬। গত বছর তা হয়েছে ১৬১। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস-এর জরিপে জানা গেছে এসব তথ্য। গত বছর বিভিন্ন খাতে ৩৩৪টি শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে। এর মধ্যে পরিবহন খাতে ৩২টি, শিক্ষায় ১৬টি, স্বাস্থ্যে ১৪টি, বিদ্যুতে ৯টি, বিড়ি শিল্পে ৮টি, সিটি করপোরেশন ৭টি, চা শিল্পে ৬টি এবং অন্যান্য খাতে ৩২টি আন্দোলনের ঘটনা ঘটে। এসব আন্দোলন করতে গিয়ে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ৩৮৮ জন। এর মধ্যে ২১৬ জন পুরুষ এবং ১৭২ জন নারী শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আহতের ঘটনা ঘটেছে পোশাক খাতে। পরিবহন খাতে আহত ৭৫ জন এবং পাটকল শিল্পে ১৪ জন শ্রমিক আহত হন। বিলস-এর জরিপ অনুযায়ী শ্রমিক অধিকার এবং তাদের নানা দাবি নিয়ে ১৪৮টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। বকেয়া বেতনের দাবিতে ৯০টি, দাবি আদায়ে ৩৮টি, কারখানা বন্ধের কারণে ২০টি এবং কম মজুরির জন্য ১৭টি অসন্তোষের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। এরপরও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১৬-১৭’ তথ্যানুযায়ী, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত মিলে শ্রমে নিযুক্ত মানুষের সংখ্যা ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন বেড়েছে। তবে বিপরীতে বেকার মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ১ মিলিয়ন এবং বেকারত্বে হার থাকে আগের মতোই ৪ দশমিক ২ শতাংশ। গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার এ প্রতিবেদককে বলেন, ক্ষেত্র বিশেষে ঝুঁকি কমেছে। কিন্তু সামগ্রিক হিসাবে শ্রমিকদের ঝুঁকি বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগুলো যেভাবে উন্নত করার কথা ছিল, তা কিন্তু হয়নি। কম মজুরির কারণে অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বেড়েছে। এই ঝুঁকি বাড়ার পেছনে মূল দায়ী মালিকরা। এ ছাড়া রানা প্লাজাসহ নানা ঘটনায় দায়ীদের যে শাস্তি হওয়ার কথা ছিল তা এখনো আমরা দেখিনি। কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি, শ্রমিক আন্দোলন, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা, শোভন কাজ ও শ্রমবাজার সংক্রান্ত বিলসের জরিপে দেখা যায়, গত বছর ৭৬৪ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হয়। এর মধ্যে ২৭৯ জন খুন, নির্যাতনে আহত ২৬৩ জন, ১৭০ জন নিখোঁজ এবং ৩১ জন শ্রমিক আত্মহত্যা করে। সবচেয়ে বেশি মৎস্য খাতে ১৬৬ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে ১৪৬ জন নিখোঁজ, ১৯ জন আহত, ২ জন নিহত হয়। পরিবহন খাতে নির্যাতিত হয় ১২৩ জন। এর মধ্যে ৯১ জন নিহত, ২৯ জন আহত, ২ জন আত্মহত্যা করে এবং একজন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। তৈরি পোশাক খাতে নির্যাতিত হয় ১১০ জন। এর মধ্যে ৩২ জন নিহত, ৬৩ জন আহত, ৪ জন নিখোঁজ এবং ১১ জন আত্মহত্যা করে। কৃষি খাতে ২৯ জন নিহত, ২৭ জন আহত, ৬ জন নিখোঁজ এবং একজন আত্মহত্যা করে। এ ছাড়া ৫৭ জন গৃহশ্রমিকের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৮ জন নিহত, ৩৫ জন আহত এবং ৪ জনের আত্মহত্যার ঘটনা রয়েছে। জানা যায়, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এক হাজার ২০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জন নারী শ্রমিক রয়েছে। পরিবহন খাতে মারা গেছে ৪২৪ জন শ্রমিক, ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে নির্মাণ খাতে, কৃষি খাতে ১১৪ জন, দিনমজুর ৬৮ জন, পাথর উত্তোলনে ৩১ জন। মৎস্য, অভিবাসী এবং বিদ্যুৎ খাতে মারা গেছে ২৭ জন শ্রমিক। ২০১৭ সালের সঙ্গে তুলনা করলে গত বছর দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল বেশি। ২০১৭ সালে পরিবহন খাতে ৩০৭ জনের মৃত্যু হয়, আর গত বছর সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪২৪ জনে। নির্মাণ খাতে ছিল ১৩১ জন, গত বছর সেটি হয় ১৬১ জনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর