সোমবার, ২০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই তদন্ত কমিটি রূপপুর প্রকল্পের বালিশ কাহিনি নিয়ে

বালিশের মূল্য ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা উঠানোর খরচ ৭৬০ টাকা, বৈদ্যুতিক কেটলির দাম ৫ হাজার ৩১৩ টাকা উঠানোর খরচ ২ হাজার ৯৪৫ টাকা, বৈদ্যুতিক চুলার দাম ৭ হাজার ৭৪৭ টাকা উঠানোর খরচ ৬ হাজার ৬৫০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে কেনাকাটার ব্যয়ে অসঙ্গতি নিয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদফতর। একটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হলে গতকাল মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক নির্মাণাধীন ৬টি ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দাফতরিক প্রাক্কলন প্রণয়নপূর্বক ৬টি প্যাকেজে ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্যাকেজসমূহের প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৩০ কোটি টাকার নিম্নে প্রাক্কলন করায় গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে দাফতরিক প্রাক্কলন প্রণয়ন, অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদফতর থেকে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের পেমেন্ট বন্ধ রাখার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ওই কাজের বিপরীতে এখনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য সেখানে নির্মিত ভবনে আসবাবপত্র কেনা ও ফ্ল্যাটে তোলার ক্ষেত্রে ঘটেছে অস্বাভাবিক এ ঘটনা। কেজিখানেক ওজনের একটি বৈদ্যুতিক কেটলি নিচ থেকে ফ্ল্যাটে তুলতেই খরচ হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। বৈদ্যুতিক কেটলির মূল্য ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩১৩ টাকা। একই রকম খরচ দেখানো হয়েছে জামাকাপড় ইস্ত্রি করার কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি ইলেকট্রিক আয়রন ওপরে তুলতে। প্রায় আট হাজার টাকা করে কেনা প্রতিটি বৈদ্যুতিক চুলা ফ্ল্যাটে  পৌঁছে দিতে খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে ছয় হাজার টাকার বেশি। প্রতিটি শোবার বালিশ ভবনে উঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় হাজার টাকা করে। প্রতিটি বালিশের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা করে।

বিচারবিভাগীয় তদন্ত  চেয়ে রিট : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। গতকাল হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন। পরে তিনি বলেন, আগামীকাল  সোমবার (আজ) বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহ্রাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে রিটটির শুনানি হতে পারে।

রিটকারী আইনজীবী আরও বলেন, পত্রপত্রিকায় আমরা দেখেছি, ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কেনাকাটায় যে অস্বাভাবিক মূল্য ধরা হয়েছে, সে বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সেই কমিটির প্রতি জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তাই আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়েছি।

সর্বশেষ খবর