বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিদায় ভারত, ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

বিদায় ভারত, ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

হতাশায় মাথায় হাত রোহিত শর্মার -এএফপি

সেলিব্রেশনের মঞ্চটা তৈরি করেই রেখেছিল ভারত। সমর্থক ও ক্রিকেটারদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিল, জয়টা যেন কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র! কিন্তু গতকাল ভারতীয়দের পার্টি পন্ড করে দিয়ে নাটকীয় এক জয়ে ফাইনালে উঠে গেল নিউজিল্যান্ড। ১৮ রানে হেরে বিদায় নিতে হলে  ফেবারিট ভারতকে। কিউইদের ২৩৯ রানের জবাবে ২২১ রানে অলআউট কোহলিরা। যেখানে শিরোপার স্বপ্ন দেখেছিল ভারত। সেখানে সেমিতে হারের পর গ্যালারিতে তাদের সমর্থকদের কাঁদতে দেখা যায়। জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৩১ রান। কিন্তু ৪৯তম ওভারে বোলিং করতে এসে কিউই বোলার লকি ফার্গুসন মাত্র ৭ রান দিয়ে দুই উইকেট ফেলে দেন। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ভারতের হার  যে নিশ্চিত হয়ে যায় তখনই। বৃথাই গেল রবীন্দ্র জাদেজার লড়াকু ৭৭ রানের ইনিংস। বৃথাই গেল  ধোনির লড়াই। আগের দিনের ২১১ রানের সঙ্গে গতকাল আর মাত্র ২৮ রান যোগ করতে নিউজিল্যান্ড। ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপের সামনে মাত্র ২৪০ টার্গেট! প্রেসবক্সে ভারতীয় সাংবাদিকরাও যেন বেশ হাসাহাসি করছিলেন এ নিয়ে। কিন্তু ভারতের ব্যাটিং শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে দৃশ্যপট পরিবর্তন!

আর, রান মেশিন রোহিত শর্মা যে ১ রানেই আউট! পরের ওভারে অধিনায়ক বিরাট কোহলিও আউট হয়ে গেলেন সেই ১ রানেই! কী অবাক কা  আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলও ফিরে গেলেন  সেই ১ রান করেই! মাত্র ৫ রানের মধ্যে দলের  সেরা তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে যেন থরথর করে কাঁপছে ভারত।

এই সময়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের প্রেসবক্সে বেশ উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়! নিউজিল্যান্ডের ‘ভদ্রলোক’ সাংবাদিকরাও যে আবেগ মুক্ত নন তা বোঝা গেল তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশের মধ্য দিয়ে। সত্যিই তো এ বড় আবেগের ম্যাচ। বড় উচ্ছ্বাসেরও ম্যাচ। তবে ধীরে ধীরে তাদের আবেগ প্রকাশের মাত্রা বাড়তে থাকে। দলীয় ২৪ রানের মাথায় দিনেশ কার্তিকও দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছার আগে সাজঘরে ফিরে যান। ৭৫ রানে বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় রিশভ পান্থের। সুবিধা করতে পারলেন না হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়াও। দলীয় সেঞ্চুরির আগেই ৬ উইকেট হারায় ভারত। কোহলিদের হারটা মনে হচ্ছিল তখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ বাইশগজে তখন ভারতের শেষ স্বীকৃত উইকেট জুটি। এক পাশে অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি, আরেক পাশে রবীন্দ্র জাদেজা। কিন্তু এই  জুটিটাই পাল্টে দিল ম্যাচের চিত্র। বিশ্বকাপে সপ্তম উইকেট পার্টনারশিপে রেকর্ড গড়লেন তারা। দুই ব্যাটসম্যান মিলে গড়লেন ১১২ বলে ১১৬ রানের জুটি। জাদেজা খেলেছেন ৫৯ বলে ৭৭ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। ধোনিও করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। এই ম্যাচে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেছেন কিউই ফিল্ডাররা। জিমি নিশামের ক্যাচ, মার্টিন গাপটিলের জাদুকরী থ্রো-ই তো এ ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে। নিউজিল্যান্ডের এই জয় কেবল ভারতের দম্ভে আঘাত নয়, যারা ভেবেছিলেন এই বিশ্বকাপে কিউইরা সেমিফাইনালে খেলার যোগ্য নয় তাদের বিশ্বাসে সজোরে চপেটাঘাতও। কিউইরা যেন গোটা ক্রিকেট বিশ্বকেই স্মরণ করিয়ে দিলেন, ‘আমরা কিন্তু গত আসরেও ফাইনাল খেলেছি!’ এই নিউজিল্যান্ড এমন এক দল, বিশ্বকাপের আগেও যাদের কেউ খুব বড় তারকা ছিলেন না। তবে এখন সবাই মহাতারকা হতে চলেছেন। রূপকথা লিখতে আর মাত্র এক ম্যাচ দূরে নিউজিল্যান্ড।

সর্বশেষ খবর