ব্যাংকিং খাতের রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও সাধারণ নিরীহ ব্যাংকারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঋণ, আর্থিক লেনদেনের তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি দেখলেই ঘুম হারাম হয়ে যায় সাধারণ ব্যাংক কর্মকর্তাদের। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় মূল অপরাধীকে বাদ দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করার ঘটনা ঘটেছে। অনুসন্ধান পর্যায়েও গ্রেফতার করা হচ্ছে কর্মকর্তাদের। আর এতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুরো ব্যাংকপাড়ায়। এখন নিরীহ ব্যাংক কর্মকর্তারাই ফেঁসে যাচ্ছেন। ফলে ব্যাংকের অসৎ শীর্ষ কর্মকর্তাদের কিছুই হচ্ছে না। বন্ধ করা যাচ্ছে না অনিয়ম-জালিয়াতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম-জালিয়াতি বন্ধ করতে হলে রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় আনতে হবে। লোক দেখানোর জন্য নিরীহ কর্মকর্তাদের ফাঁসালে অনিয়ম বন্ধ হবে না। জানা গেছে, গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। একাধিক বৃহৎ শিল্প গ্রুপ এসব ঘটনায় জড়িত। এর বাইরে ছোট-বড় বিভিন্ন অনিয়ম-জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। দুদক কর্মকর্তাদের অনুসন্ধান পর্যায়েই যে-কাউকে গ্রেফতারের আইনি ক্ষমতা রয়েছে। আর ক্ষমতার প্রয়োগও করছেন তারা। ফলে ব্যাংকাররাও রয়েছেন আতঙ্কে। এক হিসাবে দেখা গেছে, গত এক বছরে শতাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছেন দুদকের হাতে। এসব গ্রেফতারের বাইরে সহস্রাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে দুদকের। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তারা এখন গ্রেফতার আতঙ্কে ঘুমাতেও পারছেন না। অনেক কর্মকর্তার চাকরি শেষ হওয়ার পরও গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন। এসব মামলায় শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত নয়, বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। দুদকের অভিযানে গ্রেফতারের তালিকায় দেখা গেছে, ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার, সিনিয়র অফিসার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ডিজিএম পর্যন্ত কর্মকর্তারা রয়েছেন। এসব ঘটনায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের নাম এলেও গ্রেফতার বা মামলায় তাদের নাম আসে না। ২০১৫ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনিয়ম-জালিয়াতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। ওই ঘটনার পর দুদক তার বিরুদ্ধে মামলাও করে। তবে গ্রেফতার করা হয় নিচের সারির কয়েকজন কর্মকর্তাকে। তারা এখন জামিনে রয়েছেন। তবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া ওই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ব্যাংকিং খাতের স্মরণীয় কেলেঙ্কারির হল-মার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঘটনায় দুদকের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা। এর মধ্যে একজন জিএম পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকলেও পরিচালনা পর্ষদ বা ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা ছিলেন না। এখনো শীর্ষ ব্যক্তিদের অনেকে ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করছেন। ওই দুই গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির ঘটনার পর রাষ্ট্রায়ত্ত আরেকটি ব্যাংক থেকে দুটি গ্রুপের জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় নাম আসে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। কিন্তু দুদক থেকে গ্রেফতার করা হয় কয়েকজন কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ডিজিএম পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। শীর্ষ পর্যায়ের কোনো ব্যক্তির কিছুই হয়নি। এদিকে নড়াইলে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, যিনি গত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার বিরুদ্ধে লড়েছেন। তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ব্যক্তি তার একটি ফ্যাক্টরির নামে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক থেকে ১৫ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সহায়তাকারী স আদ্যাক্ষরের এক দালাল সবকিছু ম্যানেজ করে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের রক্ষা করে নিরীহ ব্যাংকারদের ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। জানা গেছে, অনিয়মে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার ও অন্য কর্মকর্তা। ব্যাক টু ব্যাক এলসির খলনায়ক ওই ব্যবসায়ীসহ সবাই জামিন নিয়ে মিলেমিশে আত্মসাৎকৃত টাকা ভোগ-উপভোগ করেছেন। অথচ যে কর্মকর্তার কোনো স্বাক্ষর নেই, সম্পৃক্ততা নেই, প্রধান শাখায় যিনি কর্মরত ছিলেন, সে কর্মকর্তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন তারা। দুদক কর্মকর্তাদের অভিযানে মূল আসামি ও লুটেরাদের খবর নেই। নিরীহ ব্যাংক কর্মকর্তাকে এভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে ব্যাংকপাড়ায়। অনেকে এখন ঋণ ও ব্যাক টু ব্যাক এলসির কাগজে স্বাক্ষরেই ভয় পাচ্ছেন। গত এক বছরে বেসরকারি ব্যাংকের একাধিক জালিয়াতির ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদকের হাতে অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। শুধু ফারমার্স ব্যাংকের এক পরিচালকের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর কোনো ব্যাংকের পরিচালক বা ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে আটক বা গ্রেফতার হতে হয়নি। কিন্তু কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ হয়েছে একাধিক সময়। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তারা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিরীহ ব্যাংক ম্যানেজার, ঋণ কর্মকর্তাদের ফাঁসানো হচ্ছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নানা ধরনের অনিয়ম হয়। এসব অনিয়মে সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত থাকেন। যারা জড়িত থাকবেন তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। হোক তা শীর্ষ পর্যায়ের বা নিচের পর্যায়ের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘ব্যাংকের যে কোনো ঘটনায় বা অনিয়মে সব পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত থাকেন। এটি ঠিক হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় শীর্ষ পর্যায়ের কারও নির্দেশে তারা অনেক কিছু করতে বাধ্য হন। আমরা বেশির ভাগ সময় দেখি নিম্নস্তরের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করতে। এতে ব্যাংকিং অনিয়ম কমানো যাবে না। একটু সময় নিয়ে হলেও প্রভাবশালী ও জড়িত শীর্ষ রাঘববোয়ালদের ধরা উচিত।
শিরোনাম
- মধ্যরাতে উত্তাল বুয়েট, বিক্ষোভ ঢাবিতেও
- লিবিয়া তহবিল কেলেঙ্কারিতে ৫ বছরের সাজা, কারাগারে ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট
- গিফট নিয়ে হয়ে গেলাম প্রতারক : তানজিন তিশা
- টিকটকে আশ্লীলতা, আদালতের নির্দেশে বিয়ে করতে হচ্ছে দুই নাইজেরিয়ান ইনফ্লুয়েন্সারকে
- ১৪ বলে ৩৯ রান, তবু সুপার ওভারে নেই রিশাদ! প্রতিপক্ষও অবাক
- এআই এজেন্ট: শুধু নির্দেশ নয়, নিজেরাই নিচ্ছে সিদ্ধান্ত
- ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হাতির আক্রমণে দুই মাহুত আহত
- ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স, স্বাক্ষরিত হতে পারে প্রতিরক্ষা চুক্তি
- ইথিওপিয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৪
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
- সুপার ওভারের রোমাঞ্চে সিরিজে ফিরল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক বুধবার
- গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পোল্যান্ডে অর্ধশতাধিক সন্দেহভাজন আটক
- আরও দুই জিম্মির মরদেহ ফেরত দিচ্ছে হামাস
- জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে বিনা নোটিশে বন্ধ হবে গণমাধ্যমের পোর্টাল : ফয়েজ আহমদ
- প্রথমবার মশা শনাক্ত হলো যেদেশে
- ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগে ফেনীতে বিএনপি নেতা বহিষ্কার
- প্রথমবারের মতো ফিফা টিডিএস ওয়ার্কশপ আয়োজন বাফুফে’র
- নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে তীব্র গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক
- আরও ১৫ ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দিল ইসরায়েল
ব্যাংকপাড়ায় দুদক আতঙ্ক
রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, ফেঁসে যাচ্ছেন নিরীহ কর্মকর্তারা
আলী রিয়াজ
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

লিবিয়া তহবিল কেলেঙ্কারিতে ৫ বছরের সাজা, কারাগারে ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট
১ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

টিকটকে আশ্লীলতা, আদালতের নির্দেশে বিয়ে করতে হচ্ছে দুই নাইজেরিয়ান ইনফ্লুয়েন্সারকে
৬ ঘণ্টা আগে | পাঁচফোড়ন