বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ সিদ্ধান্তে, আসছে সংস্কার

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যক্তি ইমেজের ওপর প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি তার অবর্তমানে চলবে যৌথ নেতৃত্বে। থাকছে না পার্টির চেয়ারম্যানের একক কর্তৃত্ব। গঠনতন্ত্রের ২০/১ক ধারা উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে পার্টির চেয়ারম্যান যখন-তখন যে কাউকে বহিষ্কার বা পদোন্নতিসহ গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না। সেক্ষেত্রে পার্টির প্রেসিডিয়ামের আট থেকে ১০ জন সদস্যের ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি’ থাকবে। পার্টির চেয়ারম্যান এই কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেবেন। পার্টির কাউন্সিলে এসব নিয়মনীতি অনুমোদিত হবে। আর কাউন্সিল হবে আগামী ডিসেম্বরে। জানতে চাইলে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সবার মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিকভাবে দল পরিচালনা করতে চাই। এইচ এম এরশাদের জায়গা পূরণ হওয়ার নয়। আমি খাদেম হয়ে কাজ করতে চাই। পার্টির নেতা-কর্মীরা যতদিন চাইবেন ততদিন আমি এই দায়িত্বে থাকব। তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদসহ আমরা সবাই জাতীয় পার্টিতে ঐক্যবদ্ধ। আগামীতেও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পার্টিকে আরও শক্তিশালী করে এইচ এম এরশাদের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। জানা যায়, গঠনতন্ত্রের ২০/১ক ধারায় আছে ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পার্টির সর্বপ্রধান কর্মকর্তা গণ্য হইবেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত থাকিবেন। এই ক্ষমতাবলে তিনি প্রয়োজনবোধে প্রতিটি স্তরে কমিটি গঠন, পুনঃগঠন, বাতিল, বিলোপ করিতে পারিবেন। তিনি যে কোনা পদ সৃষ্টি বা অবলুপ্ত করিতে পারিবেন। চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির যে কোনো পদে যে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, যে কোনো পদ হইতে যে কোনো ব্যক্তি অপসারণ ও যে কোনো ব্যক্তিকে তাহার স্থলাভিষিক্ত করিতে পারিবেন’। এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলের আর ভাঙন চান না নেতা-কর্মীরা। দলীয় নেতা-কর্মীদের দাবি এরশাদের অনুপস্থিতিতে দল ভাঙা নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী করতে হবে। এক্ষেত্রে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকায় থাকবেন। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের দল পরিচালনা করবেন। তাদের যৌথ নেতৃত্বে চলবে দল। দল ভাঙা নয়, এরশাদের অপূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই যে কোনো মূল্যে দলের ঐক্য ধরে রাখা হবে।  পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, যারা দলে বিশৃঙ্খলা করতে চান, তারা সুবিধা করতে পারবেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলকে একতাবদ্ধ রাখবেন। দল ভেঙে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে জীবিত পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টির থেকে মৃত এরশাদের জাতীয় পার্টি আরও বেশি শক্তিশালী হবে। জানা যায়, এইচ এম এরশাদের কোনো সিদ্ধান্তে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত তার কথাই ছিল চূড়ান্ত। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের সিনিয়রদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত চান। এ জন্য পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মুজিবুল হক চুন্নুসহ আট থেকে দশ জনের একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি করতে চান। যাদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া পার্টির চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এরশাদের জীবনকালেই দুটি ধারা ছিল জাতীয় পার্টিতে। এরশাদের বাইরে আরেকটি ধারা হলো রওশন এরশাদ কেন্দ্রিক। জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার পর দলের নাখোশ একটি অংশ নতুন করে ভর করে রওশন এরশাদের ওপর। জি এম কাদের দলের কোনো কর্মসূচি দিলে সেখানে অনুপস্থিত থাকেন রওশন এরশাদসহ একটি অংশ। পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, দল চলবে রওশন ও কাদেরের যৌথ নেতৃত্বে। এইচ এম এরশাদ তার ছোট ভাই জি এম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগামী কাউন্সিলে যদি একাধিক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব আসে তাহলে তখন পরিস্থিতিই বলে দেবে কে হবেন পার্টির চেয়ারম্যান। নেতা-কর্মীরা বলছেন, বেগম রওশন এরশাদের যেহেতু বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকা পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাই তিনিই বর্তমান সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকায় থাকবেন। আর এইচ এম এরশাদের শেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জি এম কাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে দল পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে জি এম কাদেরকে পার্টির নেতা-কর্মী বিশেষ করে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। তারা বলছেন, জাতীয় পার্টি যদি আবারো ভাঙে তাহলে তাতে কারও মঙ্গল হবে না। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, এইচ এম এরশাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জি এম কাদের আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান। আর জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বেগম রওশন এরশাদকে চাই। প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, এইচ এম এরশাদের অবর্তমানে তার আদর্শকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। পার্টিতে গ্রুপিংয়ের কোনো অবকাশ নেই। সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, জাতীয় পার্টি কীভাবে চলবে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এইচ এম এরশাদের আত্মার শান্তির লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর