বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে আলটিমেটাম

নির্দেশনা না মানলে শাস্তি পাবে ব্যাংক

মানিক মুনতাসির

সিঙ্গেল ডিজিট ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাস্তবায়নের আলটিমেটাম আসছে ব্যাংকগুলোর প্রতি। অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত বেশির ভাগ ব্যাংকই ইতিমধ্যে সরকারের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো    এ নিয়ে গড়িমসি শুরু করেছে। ৪ আগস্ট বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে সরকারের এ সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শিগগিরই এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করার কথা। এদিকে একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে, যে কোনো উপায়ে হোক এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। কেননা চড়া সুদের কারণে অনেক ব্যবসায়ীই লোকসানের মুখে পড়েন। ফলে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রয়োজনে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ জন্য অক্টোবরের পর ব্যাংকগুলোর ত্রৈমাসিক ঋণদানপত্র বিশ্লেষণ করা হবে। অক্টোবরের মধ্যে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলে ডিসেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। এর পর থেকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। অবশ্য এর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে নোটিস দিয়ে বাস্তবায়ন না করার কারণ জানতে চাওয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংকের এমডি, চেয়ারম্যানরা ৪ আগস্ট অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সরকারের এ পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হারের পাশাপাশি সরল সুদ হার বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। চক্রবৃদ্ধি সুদের হার এশিয়ার কোনো দেশে নেই। ব্যাংকগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুদেরও সুদ নিচ্ছে। ফলে ক্রেতারা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করলেও মেয়াদ শেষে শুধু সুদই পরিশোধ হচ্ছে। আর ঋণ ঋণই থেকে যাচ্ছে। এভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটতে পারে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সূত্র জানায়, দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যাংক ঋণের চড়া সুদের কারণে অনেক উদ্যোক্তাই রুগ্্ণ হয়ে যাচ্ছেন। ফলে ব্যাংক ঋণের কিস্তি খেলাপি হলেই উদ্যোক্তাদের ওপর দ-সুদের খড়্গ নামছে। এতে ওই ব্যবসায়ী আরও বেশি সমস্যায় পড়ছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি এক্সিট পয়েন্ট বের করা হয়েছে, যেখানে ব্যবসায়ীদের অনাদায়ী ঋণের কিস্তির পরিমাণ ছোট করে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হার বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়ে এলেও ব্যাংকগুলো তা পরিপালন করছে না। এমনকি সরকারি আমানত বেসরকারি ব্যাংকে রাখার মতো শর্ত সরকার মেনে নিলেও এ নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। নিজেদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না, খেলাপি ঋণ বাড়ছে বললেও বছর শেষে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা ঠিকই বাড়ছে। উচ্চ সুদ হার, মুদ্রাবাজার ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফার পথে হাঁটলেও শিল্পে পুঁজি জুগিয়ে কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে ব্যাংকগুলোর অনীহা রয়েছে এখনো। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো নথির তথ্য অনুযায়ী, এখনো দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক ১১ থেকে ১২ শতাংশ সুদ আদায় করছে। এ ছাড়া নিজেদের ডিপোজিট বাড়াতে এবং রিপোর্ট ভালো দেখাতে আমানতের সুদ হারের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া রেট ৬ শতাংশ মানছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮ বা ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে কয়েকটি ব্যাংক। জানা গেছে, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর সময় প্রকৃত তথ্য গোপন করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ তুলেছেন খোদ সাবেক ও বতর্মান মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা। এ নিয়ে সংসদেও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে মাত্র কিছুদিন আগে। ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সাবেক ও বর্তমান একাধিক মন্ত্রী ও এমপি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শিল্পপতিরাও অর্থমন্ত্রীর কাছে বিস্তরভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, সিঙ্গেল ডিজিট সুদের হারের আড়ালে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের শুভঙ্করের ফাঁকি দিচ্ছে।  এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার ও উচ্চ হারের খেলাপি ঋণ- এ দুটি বিষয়ই আমাদের অর্থনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে এক ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। ব্যাংক ঋণের সুদ একটি গ্রহণযোগ্য ও ব্যবসাবান্ধব পর্যায়ে নিয়ে আসতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। সে জন্য কার্যকর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।’ সিঙ্গেল ডিজিট সুদ হারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ নজরদারি করা হচ্ছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। যেসব ব্যাংকের এমডি এখনই ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে অনীহা প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায় থেকে কথা বলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটা অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককেও অবহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের (বিএবি) পক্ষ থেকেও ব্যাংকের এমডিদের ওপর ঋণের সুদ কমাতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর