যৌন হয়রানির অভিযোগে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদেরই অধস্তন এক নারী সহকর্মী। এই তিন কর্মকর্তা হলেন- ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন, হেড অব সিএসআরএম আবদুল ওয়াদুদ ও বোর্ড সেক্রেটারি (পর্ষদ সচিব) কাফি খান। রাজধানীর গুলশান থানায় সম্প্রতি মামলাটি দায়ের করেন সিটি ব্যাংকের সাবেক সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরা সুলতানা পপি। এর আগে তিনি ব্যাংকের পর্ষদে এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। মামলা করায় উল্টো তাকে চাকরিচ্যুত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, গুলশান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪০৬/৫০৬ ধারায় মামলা করেন মনিরা সুলতানা পপি। মামলার অভিযোগে শ্লীলতাহানি ও শ্লীলতাহানিতে সহায়তা প্রদান এবং অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও হুমকি প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, ব্যাংকে যোগদান করার পরপরই মাসরুর আরেফিনের নিয়মিত ইভ টিজিংয়ের শিকার হন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় এমডির এসব আচরণ সহ্য করেই তাকে কাজ করতে হয়। ২০১১ সালে অন্য আসামি হেড অব সিএসআরএম আবদুল ওয়াদুদ গাড়িতে লিফট দেওয়ার নাম করে তার ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেন। লিফটের ভিতরে, সিঁড়িতে অফিস চলাকালে তাকে হয়রানির শিকার হতে হয়। এ ঘটনা ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার টিটো এবং পরিচালক তাবাসসুম কায়সারকে জানান তিনি। পর্ষদে আলোচনায় আসার পর কনসালট্যান্ট রাজা দেবনাথ লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। এরপর ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তারা তাকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। বর্তমান ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে একই ফ্লোরে কাজের পরিবেশ নেই, এ কথা জানানোর পর গত বছর সেপ্টেম্বরে মনিরা সুলতানাকে প্রধান কার্যালয় থেকে বদলি করা হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর ডিএমডি (অপারেশন) মাহিয়া জুনেদ এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান তাকে চাকরি খুঁজতে বলেন।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে দেখা করে অন্যত্র চাকরি খুঁজতে বলার কারণ জানতে চাইলে এমডি ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার কথা অনুযায়ী না চলা এবং তার আবেদনে সাড়া না দেওয়া ও দুর্নীতিগ্রস্ত ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ায় জড়িত না থাকাই ভুক্তভোগী ওই নারী কর্মকর্তার অপরাধ। ২১ জানুয়ারি পর্ষদ সচিব তাকে ডেকে বলেন, তিনি যেন অফিসে আর না আসেন। এ সময় এমডি মাসরুর আরেফিন, আবদুল ওয়াদুদ, কাফি খান তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন। সরাসরি গায়ে আপত্তিজনকভাবে হাত দেওয়া, কটূক্তি ও লালসার শিকার বানানোর চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তারা তার দীর্ঘ ১৭ বছরের করপোরেট ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেন। মামলার এজাহারে বাদী আরও বলেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে লাকি শিপ বিল্ডার্সকে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়। নানা অসংগতি ও অনিয়ম করে দেওয়া এ ঋণের প্রক্রিয়ায় তিনি যুক্ত হতে রাজি হননি। এ কারণে তাকে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়তে হয়।
মামলার বাদী মনিরা সুলতানা জানান, গত ১০ জুলাই গুলশান থানায় এ বিষয়ে জিডি করেন। পরে থানায় মামলা করেন। এই মামলার কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাকে। একই সঙ্গে উল্টো তার বিরুদ্ধে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মিথ্যা মামলা করেছে এবং তাকে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিচ্ছে।