মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মোবাইল ফোনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় মনিটরিং করবেন শেখ হাসিনা

১৪ লাখ টাকায় বসানো হচ্ছে ৭০টি সিসি ক্যামেরা ছাত্রলীগের অফিস হবে বেজমেন্টে

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পর এবার দলের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি মনিটরিং করবেন কার্যালয়ের কর্মকা-। সে লক্ষ্যে কার্যালয়ে বসানো হচ্ছে ৭০টি সিসি ক্যামেরা। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে সভানেত্রী সার্বক্ষণিক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন মোবাইলে। দলের নিজস্ব অর্থায়নে এই সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ ইতিমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে।

দলীয় সূত্রমতে, উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের অত্যাধুনিক ১০ তলা ভবনের নিরাপত্তাঝুঁকি এবং যে কোনো জায়গা থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে দলীয় সভানেত্রী যেন সংযুক্ত হতে পারেন সে বিবেচনায় নিয়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের অফিসের জন্য তৃতীয় তলার বদলে বেসমেন্টে রুম দেওয়া হচ্ছে। গত এক দশক ধরে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় নেতা-কর্মীদের পদচারণে সরব থাকলেও কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ছিল অনেকটাই উপেক্ষিত। মহানগরী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাহারা দিলেও কেন্দ্রীয় নেতারা ধানমন্ডির কার্যালয়ে সময় দিতেন। এতে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতার মধ্যে সেতুবন্ধের অভাব ছিল বলে মনে করেন কেউ কেউ। এই পর্যবেক্ষণ থেকেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চাইছেন দলের ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিও সরব থাকুক নেতা-কর্মীর ভিড়ে। বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও কেন্দ্রের অধিকাংশ নেতাই বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কার্যালয়কে পাশ কাটিয়ে ধানমন্ডির কার্যালয়ে সময় দেন বেশি। মহানগরী আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। সূতমতে, আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এবং চার সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কার্যালয়ে পদপ্রত্যাশী ও উৎসুক নেতা-কর্মীর আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী চান ধানমন্ডির কার্যালয়ের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কার্যালয়মুখী হোন দলের নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যে তিনি সে নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ধানমন্ডির সভানেত্রীর কার্যালয় অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি সফরে বিদেশে গিয়ে ইতিমধ্যে কয়েক দফা ভিডিও কলের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক কাজ শেষে চলে গেলেও রুমে কেউ না থাকলেও টিভি, ফ্যান ও লাইট চালু থাকে। সিসিটিভিতে এসব দেখে কয়েক দফা নেতা-কর্মীদের ফোন করে সেগুলো বন্ধ করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। দলটির নেতারা বলছেন, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপচয় পছন্দ করেন না। তিনি চান এ ছাড়াও দলীয় কার্যালয় পরিচ্ছন্ন ও ছিমছাম থাকুক। সে কারণেই ধানমন্ডির কার্যালয়ের পর এবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় মনিটরিংয়ে আওতায় নিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা। গতকাল সরেজিমনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট লাগানোর কাজ। নিচতলায় মোট ১৬টি, প্রথম তলায় ৮টি, এ ছাড়া দ্বিতীয় তলা থেকে নবম তলার প্রতিটিতে ৪টি করে ক্যামেরা লাগানো আছে। এ ছাড়া ছাদে লাগানো হয়েছে ৪টি এবং জরুরি বের হওয়ার পথে ১০টি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীর ভিড় হওয়ার কারণে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষণ মনিটরিং করবেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া মনিটরিং করছেন। বিপ্লব বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অত্যাধুনিক কার্যালটির নিরাপত্তাঝুঁকির বিবেচনায় এবং দেশ কিংবা বিদেশের যে কোনো জায়গায় থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে যেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেন সে কারণেই সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।’ দলীয় সূত্রমতে, ১০ তলাবিশিষ্ট এই ভবনে দলীয় সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য রয়েছে সুপরিসর পৃথক কক্ষ। সভানেত্রীর কার্যালয়ের পাশে রয়েছে বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা। মূল দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও সহযোগী সংগঠন ও মহানগরী আওয়ামী লীগের জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার এ উদ্যোগের কারণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি আবারও সরব হবে। প্রাণ ফিরে আসবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের।

সর্বশেষ খবর