শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাবি ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে কঠোর ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

আয়োজকদের ব্যর্থতার কারণেই নাইমুল আবরার হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাবি ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে কঠোর ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে তোলা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন, তাদের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। যদি তারা তা প্রমাণ করতে পারেন, তবে উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায়, অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় হতাহত সাংবাদিকদের পরিবারকে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।    

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো রকম আইনগত ভিত্তি ছাড়া আন্দোলনের নামে ক্লাস বন্ধ, ভিসিদের বাসভবন ও কার্যালয়ে হামলা বরদাস্ত করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে?উন্নয়ন কাজ শুরু হলেই আন্দোলন কেন এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সব থেকে যেটা লক্ষ্যণীয়, যখন উন্নয়নের কোনো কাজ দেওয়া হয়, তখনই এই আন্দোলন যেন আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে। কেন? তাহলে যারা আন্দোলন করেন তাদেরও ভাগ-বাটোয়ারার ব্যাপার আছে, নাকি ভাগে কম পড়ছে, আমার প্রশ্ন সেখানেও আছে। তিনি বলেন, আমি জানি, আমি খুব রূঢ় হচ্ছি, কিন্তু বাস্তবে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটা কী ধরনের কথা? হয়তো প্রজেক্ট পাস হয়ে গেছে টাকাও ছাড় হয়নি। তার আগেই দুর্নীতির অভিযোগে আন্দোলন, কী কারণে? কার ভাগে কম পড়ল যে এই আন্দোলন? আন্দোলনে থাকা শিক্ষকদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে ছেলেমেয়েদের জীবন নষ্ট করার কী অধিকার আছে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে, যদি অভিযোগ থাকে বলুক আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। কিন্তু যেখানে আমরা একজনকে ভিসি বানালাম তার বিরুদ্ধে আন্দোলন। আর এর মধ্যে শিক্ষকও জড়িত। শিক্ষকরা ছাত্রদের ব্যবহার করেন। এটা কোন ধরনের কথা? এখানে কি কোনো ডিসিপ্লিন থাকবে না? কোনো আইন থাকবে না? আইন প্রয়োগ হবে না? কেউ কেউ এদের উসকানি দেয়। এ বিষয়গুলো একটু দেখা দরকার আপনাদের। আবরার ফাহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের পরও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়েও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বুয়েটের সমস্যাটা কি সেটা তো বুঝতে পারছি না। আমরা তো সবই করলাম। তারপরও এই আন্দোলন কীসের জন্য? বুয়েটে যে আবরার হত্যার ঘটনা ঘটল, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্ররা আন্দোলনের আগে যখনই খবর এসেছে তখনই কিন্তু আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। এখন তাহলে আন্দোলন কীসের জন্য, আমার সেটাই প্রশ্ন। দিনের পর দিন ক্লাস করতে দেবে না, নিজেরা ক্লাস করবে না। তাহলে তারা ইউনিভার্সিটিতে থাকবে কেন? এ ধরনের কাজ যারা করবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের এক্সপেল করে দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, আজ যারা ছাত্র তারা কাল থাকবে না। তাহলে ভাঙচুর কেন? যাদের জন্য কাজ, তারাই যদি ভাঙে তাহলে আমরা কাজ করব কীভাবে? এগুলো সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা উচিত। এসবের পেছনে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ আছে। উন্নয়ন অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার এসব ভালো লাগছে না। 

প্রথম আলো এ ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটায় : রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমুল আবরারের অপমৃত্যুর ঘটনায় প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা অনুষ্ঠান আয়োজন করে, তাদের একটা দায়িত্ব থাকে। রেসিডেন্সিয়ালে একটা ঘটনা ঘটল। আয়োজকরা এটাকে এতটা নেগলেক্ট করেছে! বাচ্চাটা মারা গেছে, এরপরও ঘটনাটা চাপা দিয়ে অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছে। ধানমন্ডিতে এতগুলো হাসপাতাল, তবুও মহাখালীতে নিয়ে গেল। প্রথম আলো এ ধরনের একটা ঘটনা কীভাবে ঘটায়? তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই? ছোট ছোট বাচ্চারা এখানে পড়াশোনা করছে। তাদের নিরাপত্তা না দেখা এটাও তো গর্হিত অপরাধ। এটা তো বরদাস্ত করা যায় না। 

মানুষকে সহযোগিতা করব সেটা নিয়েও প্রশ্ন আসে : প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বিভিন্নজনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বনামধন্য এক আইনজীবী প্রশ্ন করলেন, কোন নীতিমালায় এসব দেয়। আমি বলেছি, বলে দেন, প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছার নীতিমালায় দেয়। আপনি যদি অসুস্থ হয়ে কখনো চান, আপনাকেও দেওয়া হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি ফান্ড গঠনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যতদিন আছি দিচ্ছি। কিন্তু আমি তো সবসময় থাকব না। তাই মালিক বা সাংবাদিকদের নিজেদের গরজ থেকেও যদি কিছু দেওয়া হয়। ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, একটা ফান্ড করা উচিত। সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মালিকরা চালু করতে চান না, আমরা কী করব। আর কোনো কোনো মালিক তো পেছনে লেগেই থাকে সারাক্ষণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নারীদের স্বাধীনতা আছে বলে তারা অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয়গুলো মুখ ফুটে বলতে পারে। যারা অপরাধী তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করুন। এটার দিকে ফোকাস করতে হবে। অনেক নির্যাতনের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসার কারণে ভুক্তভোগীরা বিচার পাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নুসরাতের ঘটনাটা পত্রিকাগুলোতে না এলে এটা ধামাচাপা দিয়ে দিত। আমার কাছে অপরাধী অপরাধীই। তার বিচার হবেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের লেখার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারি। এটা চালিয়ে যাবেন। এ সময় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তথ্য সচিব আবদুল মালেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

সর্বশেষ খবর