শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক

অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান

প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করেই বাংলাদেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভেদ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে এসেছি। আমি জানি, দেশের কিছু লোকের এটা পছন্দ হয় না। একটি চক্র আছে যারা নানাভাবে একটা ঘটনা ঘটিয়ে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করতে পারলেই বেশি খুশি হয়। পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প বন্ধ করার জন্য যারা বিদেশে তদবির করে বিশ্বব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দেয়, তারা দেশের কত বড় শত্রু তা সবাইকে বিবেচনা করতে হবে। এরা কখনো জনগণের স্বার্থ দেখে না, নিজের স্বার্থ দেখে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। বাংলাদেশ বিজয়ের পতাকা নিয়েই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে।’ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অচিরেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা দারিদ্র্য ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি, আরও কমাব। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। আর চলমান দুর্নীতি-সন্ত্রাস-মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস-মাদকের দুষ্টচক্র থেকে সমাজকে আমাদের রক্ষা করতেই হবে। কোন দল করে আমরা দেখতে চাই না, অপরাধী অপরাধীই। কাউকে ছাড় দিইনি।’ পিয়াজ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশে পিয়াজ পাওয়া যায় তা খোঁজ নিয়ে আমরা পিয়াজ আনার ব্যবস্থা করছি। ইতিমধ্যেই ৫ হাজার মেট্রিক টন এলসি খোলা হয়েছে। সেখানে লোক চলে গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে।’ এ সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অবাহত আছে ও থাকবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের মাত্র একটি রাজ্য ছাড়া গোটা ভারতে পিয়াজ ১০০ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ভারতও পিয়াজ আমদানি করছে। এ ক্ষেত্রেও আমরাও বসে নেই। মিসর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমরা পিয়াজ আমদানি করছি। অল্প দিনের মধ্যেই মিসর ও তুরস্ক থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পিয়াজ চলে আসবে। এলেই তা জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে, টিসিবি ট্রাকে করে তা বিক্রি করবে।’

পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এক সংসদ সদস্য বলেছেন, ইন্ডিয়ায় নাকি পিয়াজের দাম ৮ টাকা কেজি। মাননীয় স্পিকার, এটা ইন্ডিয়ার একটি স্টেটে। অন্য কোনো স্টেটে তারা সেই পিয়াজ যেতে দিচ্ছে না। অন্যান্য জায়গায় ১০০ টাকা রুপি। তাদেরই পিয়াজের অভাব এবং তারা আমদানি করছে। এ ক্ষেত্রে আমরাও বসে নেই। আমার অনুরোধে যেসব এলসি খোলা হয়েছিল সেসব পিয়াজ আমরা আনতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশে পিয়াজের দাম বাড়ছে। পিয়াজ কিন্তু আছে তা দেখা যাচ্ছে। আমরা টানা অভিযান চালিয়েছি। দেখা যাচ্ছে পিয়াজ পচে যাচ্ছে কিন্তু বাজারে ছাড়ছে না। এজন্য আমরা টিসিবির মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে পিয়াজ বিক্রি করছি। এ আমরা বিদেশ যেমন তুরস্ক ও মিসর থেকে পিয়াজ আমদানি শুরু করেছি। সেখানে আমাদের কর্মকর্তারা চলে গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি নির্দেশ দিয়েছি আসার সঙ্গে সঙ্গেই জেলায় জেলায় ট্রাকে করে চলে যাবে। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেতন আছি যাতে এ সমস্যাটা না হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আসলে শুধু একটি মৌসুমে পিয়াজ উৎপাদন হয়। ১২ মাস যাতে হতে পারে সেভাবে উদ্ভাবন করেছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। আমরা ভবিষ্যতে এই পিয়াজের বীজ বাজারজাত করব। সে সময় আর কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। আমাদের নিজেদের চাহিদা আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারব।’

ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। কুয়াশার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় রেল দুর্ঘটনায় কিছু মানুষ মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে আমরা আছি। উল্লাপাড়ায় আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছু মানুষ আহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার পেছনে কোনো চক্রান্ত বা দুরভিসন্ধি আছে কিনা, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। কারণ দেশে একটা ঘটনা ঘটার পরপরই আরও ঘটনা ঘটে। এর পেছনেও কিছু আছে কিনা, তা খুঁজে বের করতে হবে।’

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, ‘বিশ্বের বহু দেশে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতেও তিন-চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়া নির্মাণ করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, সব বর্জ্য রাশিয়াই নিয়ে যাবে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছি।

বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের ট্রেনিং দিয়ে নিয়ে আসছি। এক্সপার্ট আমরা তৈরি করছি। রূপপুরের পর দক্ষিণে একটি দ্বীপ খুঁজছি, সেখানেও আরেকটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করব। আর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, এটা সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। এর চিমনি এত ফুট উঁচুতে যে, কোনো বাতাস সুন্দরবনে যাবে না। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই সিমেন্ট ব্যবহারে লাগে। লাইন লেগেছে এ ছাইগুলো নিতে। এতে কোনোভাবেই পরিবেশ নষ্ট হবে না, বরং ৫ লাখ গাছ লাগানো হচ্ছে।’

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন ভিসি নিয়োগ দিলেই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। শিক্ষকরা তাদের স্বার্থের জন্য ছাত্রদের ব্যবহার করবেন কেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা বন্ধ করে ছাত্রদের লেখাপড়া নষ্ট করা হচ্ছে। অনেক কষ্ট করে আমরা সেশনজট বন্ধ করেছি। কিন্তু চক্রান্ত করে সেটা আবার সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর