বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আবারও রাজপথ উত্তপ্ত করতে চায় বিএনপি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির মাস ঘিরে রাজপথের কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ছক তৈরি করছে দলটি। আসছে ৫ ডিসেম্বর দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার এক মামলায় জামিনের রায়ের দিন হাই কোর্ট এলাকায় শান্তিপূর্ণ শোডাউন করার চিন্তাভাবনাও করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। জামিন হলে বিএনপি শোডাউন থেকে সরে আসবে। না হলে ঢাকাসহ সারা দেশেই বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। সারা দেশে একযোগে কর্মসূচি পালনের জন্য মাঠে নামার প্রস্তুতির বার্তা এরই মধ্যে তৃণমূলে দেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে আজ বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল সফরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন। পরে তারা তৃণমূল নেতৃত্বকে একটি বিশেষ বার্তা দিয়ে আসেন। ঢাকা মহানগরীসহ আশপাশের জেলাগুলোয় বিশেষ বার্তাও পাঠানো হয়েছে। দল সমর্থিত সব আইনজীবীকে হাই কোর্টে যেতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ২৮ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচির বিষয়টিও ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা বলেন, তারা আশা করছেন ৫ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হবে। অন্যথায় তাঁর কারামুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি ডিসেম্বরজুড়েই শান্তিপূর্ণ নানা আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জনগণ এই সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। এখন দেশের মানুষ আন্দোলন চায়, কর্মসূচি আমরা দেব এবং সেই কর্মসূচি উপযুক্ত সময়ে দেব। আমরা এমন কর্মসূচি দেব যাতে, গণবিস্ফোরণ ঘটবে। দেশের মানুষ বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনবে। দেশ গণতন্ত্র ফিরে আসবে, আইনের শাসন ফিরে আসবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে আসবে এবং মানুষ আবার স্বস্তি ফিরে পাবে।’ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেন, ‘তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মনে করেন বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের বিকল্প নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তা-ই ভাবছেন। আমরা গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে যে কোনো ত্যাগস্বীকারে রাজি। সময়মতো আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ বিএনপির সূত্রগুলো বলছেন, সামনে আর দোয়া মাহফিল, মানববন্ধন বা আলোচনা সভা নয়। জনসম্পৃক্ত অন্য কিছুও ভাবা হচ্ছে। তবে সব কর্মসূচিই হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক। ঢাকা মহানগরী, জেলা ও বিএনপির প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর সব কটি ওয়ার্ড থেকে একযোগে গণমিছিল বের করার কথাও ভাবা হচ্ছে। প্রতিটির নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে বাসায় বসে থাকার চেয়ে রাজপথে জনবল নিয়ে শক্তি প্রদর্শনকে এখন বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এখন থেকে মিছিল-সমাবেশের পরিকল্পনাও রয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত রবিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুমতি না নিয়েই মিছিল-সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় এর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে মঙ্গলবার মিছিলসহ হাই কোর্টের সামনের সড়ক অবরোধ করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও ঘটে। সূত্রমতে, আন্দোলন সফলে সাংগঠনিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে যে ১৯টিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে এসবের দায়িত্বশীল নেতাদেরকে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক নেতা বলেছেন, শুধু আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ আইনি প্রক্রিয়ায় যা যা করা সম্ভব তাদের আইনজীবীরা গত ২১ মাসে তার সবকিছুই করেছেন। এখন সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া শিগগিরই বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তাই সরকারকে চাপ দিতে হলে রাজপথে নামতেই হবে।