শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

পদ্মা-মেঘনার চরে বিদ্যুতের আলো

কেরোসিন কুপি থেকে মুক্তি মিলবে ১৮ হাজার পরিবারের

রফিকুল ইসলাম রনি

পদ্মা-মেঘনার চরে বিদ্যুতের আলো

ঘরে ঘরে বিদ্যুতের মিটার লাগানো শেষ। চারদিকে উৎসবের আমেজ। আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে পদ্মা ও মেঘনা নদী চরের ১৮ হাজার পরিবারে মিলবে ৭০ বছরের অন্ধকার থেকে মুক্তি। শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদেরগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নের এই পরিবারগুলোতে কেরোসিনের কুপি বাতির পরিবর্তে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো।

নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা জেলা-উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এসব চর কখনো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে- এটা কারও ভাবনায় ছিল না। কিন্তু মুজিববর্ষে প্রতিটি ঘর হবে আলোকিত- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছেন নড়িয়া-২ আসনের দলীয় এমপি পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। শরীয়তপুর জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে পদ্মা ও মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা চরে প্রায় ৭০ বছর আগে থেকে মানুষের বসবাস শুরু হয়। চরের নওয়াপাড়া ও চরআত্রা ইউনিয়ন পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। আর কাঁচিকাটা ইউনিয়ন ভেদরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। জেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এ এলাকার মানুষ। বিদ্যুতের আলো এখানকার মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। সন্ধ্যা নেমে এলেই অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো চরাঞ্চল। এ অবস্থায় গত বছরের ২৩ এপ্রিল এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনতে পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর ৮০০ মিটার অংশে বিদ্যুতের লাইনের প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। সাবমেরিন ক্যাবল ও সাব পাওয়ার স্টেশনের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তিনি এ কাজ করেন।

এরপর এখন বিদ্যুতের লাইন, সংযোগসহ সব কাজ শেষ হয়েছে। ঘরে ঘরে এগুলো লাগানো হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। আগামীকাল শনিবার হবে এই শুভ কাজটি। আর তখন অন্ধকার থেকে আলো জ্বলবে ঘরে ঘরে। এ নিয়ে ঈদ উৎসবের চেয়েও বড় আনন্দ এখন চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে।

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল মুন্সী বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি দুর্গম চরে। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে- তা কখনো ভাবিনি। এ এলাকায় আগামীকাল থেকে বিদ্যুৎ জ্বলবে-এটা যেন ঈদের চেয়ে বড় আনন্দ। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এর চেয়ে গত ৭০ বছরে কোনো সুখের সংবাদ আসেনি। চরআত্রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিনা রতন বলেন, ৭০ বছর ধরে এ চরে মানুষ বসবাস করলেও বিদ্যুতের আলো বঞ্চিত ছিল। বিদ্যুৎ ছিল সবার স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে বর্তমান এমপি এনামুল হক শামীমের কল্যাণেই।

নওপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহানা হক শম্পা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চরের মানুষ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে- কখনো ভাবনার মধ্যেই ছিল না। তাও এত কম সময়ের মধ্যে? এটা বিস্ময়কর। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ¯ন্ডেœহভাজন এনামুল হক শামীম এমপি বলেই এটা করা সম্ভব হয়েছে। এটা চরবাসীর জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাই এখন সবাই আবেগে আপ্লুত।’ মুন্সীগঞ্জ বিদ্যুতের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন বলেন, আগামীকাল বিদ্যুৎ লাইনের উদ্বোধন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৮ হাজার বাড়িতে লাগানো হয়েছে বিদ্যুতের মিটার। সাব স্টেশনে মোট ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এর মধ্যে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সব সময় বাড়তি উদ্বৃত্ত থাকবে। অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে চরে কখনো বিদ্যুৎ যাওয়ার সম্ভবনা নেই।

শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমি যখন ওই চরে গণসংযোগে যাই, তখন চরবাসীর বড় দাবি ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ভোটে জিতলে তিন মাসের মধ্যেই বিদ্যুতের আলো পৌঁছাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় ও তার নির্দেশে আমি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত বছরের ২৩ এপ্রিল সাবমেরিন ক্যাবল ও পাওয়ার স্টেশনের উদ্বোধন করি। এরপর সময়ের মধ্যেই তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সব কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কারণ তিনি আমাকে মনোনয়ন না দিলে আমি চরবাসীকে কুপি বাতির আলো থেকে মুক্ত করতে পারতাম না। চরবাসীও বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।’ শুধু চরাঞ্চলের মানুষই নয়, এই চরের অনেক বাসিন্দাই প্রবাসী। তারাও বিদ্যুৎ যাওয়ার খবরে খুশি। লন্ডন প্রবাসী মো. মহসিন উদ্দিন লিখন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায় গ্রামকে শহর করার উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। শরীয়তপুর জেলার কাঁচিকাটা, চরআত্রা ও নওপাড়ার নদীবেষ্টিত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন তিনি। চরের ছেলে (শামীমের জন্ম চরে) এমপি হওয়ার মাত্র এক বছরের মাথায় এ কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন। মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা, যে কোনো দিক থেকে মূল ভূখন্ডে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা নদী পাড় হতে হয় ইঞ্জিন নৌকায়। এমন একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য বিদ্যুতের সুবিধা যেন এক ইতিহাস, যেন উন্নয়নের এক মাইল ফলক।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর