সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
দক্ষিণখানে তিন হত্যাকান্ড

ডায়েরি ঘিরে অনেক প্রশ্ন, স্বামীর সন্ধান মেলেনি

সাখাওয়াত কাওসার

রাজধানীর দক্ষিণখানে মা ও দুই শিশুসন্তানের লাশের পাশে থাকা ডায়েরি ঘিরে নানা প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে। চরম ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণে সন্তান এবং স্ত্রীকে হত্যা করে নিজের আত্মহননের বিষয়টি উল্লেখ ছাড়াও এক নারীকে ডাইনি সম্বোধন করা হয়েছে। একটি পৃষ্ঠার নিচে ওই মহিলার মুঠোফোন  নম্বর লিখে সেখানে বলা হয়েছে, ‘ওই মহিলা আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।’ ডায়েরির অন্য এক পৃষ্ঠায় এক ব্যক্তির মুঠোফোন নম্বর লিখে রেখে তাকে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি তাকে টাকা ধার দিতে চেয়ে কথা রাখেননি। ওই লেখাগুলো রাকিব উদ্দীন আহমেদ ওরফে লিটনের কি না তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তদন্ত কর্মকর্তারা। অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় শনিবার গভীর রাতে নিহত গৃহকর্ত্রী মুন্নী বেগমের ভাই মুন্না রহমান বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় মামলা করেছেন (নম্বর-২০)। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, ‘উদ্ধারকৃত ডায়েরিটির লেখা প্রকৃতপক্ষেই রকিব উদ্দীনের কি না তা নিশ্চিত হতে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এই হত্যার ঘটনাটির তদন্তে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’ শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণখানের ৮৩৮ নম্বর প্রেমবাগানের চতুর্থ তলার বাসা থেকে গৃহকর্ত্রী মুন্নী বেগম (৩৭) এবং তার দুই সন্তান ফারহান উদ্দিন (১২) ও লাইভা ভূঁইয়ার (৩) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন থেকেই গৃহকর্তা লিটনেরও কোনো খোঁজ নেই। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ডায়েরির বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লেখাগুলোতে অর্থাভাবে থাকার কারণে চরম হতাশাগ্রস্ততা থেকেই স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। লেখা হয়েছে, তিনি নিজে যদি আত্মহত্যা না করেন, তাহলে তার সন্তান ও স্ত্রীকে মানুষ অবজ্ঞা-অবহেলা করবে। এ কারণে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করার পর নিজের লাশ রেললাইনে পাওয়া যাবে এ বিষয়টি ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ ধার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করা হয়নি। এ ঘটনার জন্য একটি ফোন নম্বর দিয়ে ওই ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ওই নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও কেউ রিসিভ করেনি। এ ছাড়া ডায়েরিতে স্ত্রী-সন্তানদের দক্ষিণখান কবরস্থানে গণকবর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। দক্ষিণখান প্রেমবাগানের ‘আশ্রয়’ নামের ওই বাড়িটির তৃতীয় তলায় বসবাস করতেন বাড়ির মালিক মনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম দম্পতি। চতুর্থ তলার ডান দিকের ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন লিটন-মুন্নী পরিবার। মনোয়ার হোসেন বলেন, ১০ বছর ধরে লিটন পরিবার নিয়ে তার বাসাতেই বসবাস করছেন। তবে এই দীর্ঘ সময়ে লিটনের কোনো অসংলগ্ন আচরণ ছিল না। আগামী মার্চ থেকেই তার বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। ওই ফ্ল্যাটটি ইতিমধ্যে অন্যত্র ভাড়াও দেওয়া হয়েছে। নিহত মুন্নী বেগমের ভাই মুন্না রহমান বলেন, লিটন-মুন্নী খুবই সুখী দম্পতি ছিল। লিটনের ভাই সোহেল ডায়েরির লেখাটি লিটনের তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণখান কবরস্থানে কবর দেওয়ার কথা ডায়েরিতে লেখা থাকলেও আমরা তাদের বনানী কবরস্থানে সমাহিত করেছি।’ লিটনের সহকর্মী জুম্মন রহমানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, অফিসের অন্য সহকর্মীদের মতো তিনি নিজেও লিটনের কাছে টাকা পাবেন। বুধবার বেলা ১১টার দিকে তার সঙ্গে লিটনের সর্বশেষ কথা হয়। এর পর থেকে লিটনের মুঠোফোন বন্ধ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর