সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি কারও প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলেন না। প্রতিশোধ নিতেও যান না। যেখানে অন্যায় হয়েছে, সেখানে ন্যায় করার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটি আজ কারও কাছে লুকানো নয়। একসময় দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশকে আমরা বাংলাদেশের অবস্থার পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। কেউ আমাদের উন্নয়ন না দেখলে তা তাদের দেখার ভুল। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দেশের মানুষ অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুফল ভোগ করছেন। আমাদের ব্যাংকে টাকা নেই-এ কথা সত্য নয়। টাকা না থাকলে আমরা এতগুলো উন্নয়নকাজ কীভাবে করছি। আমাদের ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে, যা দিয়ে ৬ মাসের খাদ্য কেনা যাবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণ দিচ্ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদে রাষ্ট্রপতির প্রদত্ত ভাষণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, অনেক কষ্ট, ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের মানুষ যেন একটু সুখের মুখ দেখে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে- সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষকে সামনে রেখে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের মধ্য দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রত্যেক এমপি এই ভাষণ ভালোভাবে পড়লে দেশের জন্য আমরা যে উন্নয়ন করেছি তা জানতে পারবেন। এ সময় সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়টি আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। টাকার সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। টাকা আছে বলেই আমরা অনেকগুলো মেগা প্রকল্প নিয়েছি। ৬৮৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে মাঝে-মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। আমরা সেগুলো মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিই। যেমন করোনাভাইরাসের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, যাতে চীনে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করতে না পারে। ডেঙ্গু নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। মশার ব্যাপারে আমাদের নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু ক্ষেত্রে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ভাষণ যদি উনি ভালো করে পড়েন, তবে হতাশ না হয়ে উজ্জীবিত হবেন। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা আওয়ামী লীগকে নির্যাতন করেছে। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে ’৮৮ সালে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে।
বন্দর-স্টেশনে স্ক্যানার স্থাপনের নির্দেশ : দেশের সব বন্দর ও স্টেশনে স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয় তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সব বন্দর ও স্টেশনে স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক ২৯তম সভায় ১৩ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ের ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সরকার দেবে ৮ হাজার ৮৮৬ কোটি, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৯৩ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ ৪ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। গতকাল একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। মন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোংলা বন্দর উন্নয়নসহ ৯টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেগুলোতে ১৩ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মোংলা বন্দর দিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মালামাল পরিবহনের প্রস্তাব রয়েছে সরকারের কাছে। ইতিমধ্যে নেপাল ও ভারতের প্রতিনিধিরা এই বন্দর দেখেও গেছেন। ‘মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের জন্য ৬ হাজার ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ‘আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ (শিকলবাহা-আনোয়ারা সড়ক)’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪০৭ কোটি টাকা। ‘শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা ব্রিজ এপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। ‘পাটুরিয়া এবং দৌলতদিয়ায় আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নদীবন্দর আধুনিকায়ন’ প্রকল্পে ব্যয় প্রায় এক হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। ‘রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭২২ কোটি টাকা। ‘বিলুপ্ত ছিটমহল ও নদীবিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি টাকা। ‘হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় ১১৮ কোটি টাকা। ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        