বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দুদক ক্ষমতাসীনদের প্রতি নমনীয়, বিরোধীদের হয়রানি করে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুদক ক্ষমতাসীনদের প্রতি নমনীয়, বিরোধীদের হয়রানি করে

ড. ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষমতা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিরোধী দলের রাজনীতিকদের হয়রানি এবং ক্ষমতাসীন দল ও জোটের রাজনীতিকদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দুদক কাগজে-কলমে স্বাধীন, বাস্তবে স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলা যায় না। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর ফলোআপ’ গবেষণা ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়াতে দেশের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি দুর্নীতির মামলা কার্যকরসহ ১৬টি সুপারিশ করেছে টিআইবি। গবেষণা অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মধ্যম মানের। সংস্থাটির স্কোর ১০০তে ৬০। এ ছাড়া দুদক ৫০টি নির্দেশকের মধ্যে মোট ২১টিতে ‘উচ্চ’, ১৮টিতে ‘মধ্যম’ এবং ১১ নির্দেশকের ক্ষেত্রে ‘নিম্ন’ স্কোর করেছে। টিআইবির ফলোআপ গবেষণা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। টিআইবি একে গুণগত গবেষণা বলছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে দুদকের অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়ের নিয়ে। দুদক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়, প্রভাবিত হতে দেয় নিজেকে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পূর্বঅনুমতির বিষয়টি অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক। আমরা আশা করছি, এ ধারাটি আদালতের মাধ্যমে বাতিল হবে। বড় ধরনের দুর্নীতি, বিশেষ করে ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সংঘটিত দুর্নীতির ক্ষেত্রে দুদক খুব একটা কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, তা দেখা যায় না। মানসিকতার ঘাটতি দুদক ও সরকারের মধ্যেও রয়েছে। পৃথিবীর সব দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান, ততটুকু কার্যকর, যতটুকু কার্যকর ওই দেশের সরকার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. পারভীন হাসান এবং উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম।

দুদকের প্রয়োজন ৭ নম্বর : গবেষণা পত্রে বলা হয়, দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক মধ্যম মানের। সংস্থাটির স্কোর ১০০তে ৬০। আন্তর্জাতিক মান হিসেবে এটা মধ্যম শ্রেণির। উচ্চ শ্রেণির নম্বর শুরু ৬৭ থেকে। দুদককে মধ্যম শ্রেণি থেকে উচ্চ শ্রেণিতে যেতে তাই ভবিষ্যতে আর মাত্র ৭ নম্বর বাড়াতে হবে। গবেষণায় দুদকের ‘অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়ের’ (৪৪%) এই নির্দেশক সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে। অন্যদিকে ‘প্রতিরোধমূলক, শিক্ষামূলক ও আউটরিচ কার্যক্রমে’ (৭৫%) দুদক সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে। এরপর বেশি নম্বর পেয়েছে ‘স্বাধীনতা ও মর্যাদা’ (৬৭%) এবং ‘সহযোগিতা ও বাহ্যিক সম্পর্ক’ (৬৭) নির্দেশকে।

দুদকের তদন্ত ও মামলা দায়ের প্রশ্নে বলা হয়েছে, সম্পদের মালিকানার অবৈধ পরিবর্তন, ব্যাংক খাত ও সম্পদ আত্মসাতের বিষয়ে দুদকের ক্ষমতা প্রয়োগের ঘাটতি আছে। বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে প্যানেল আইনজীবীদের মধ্যে ঘাটতি আছে।

অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়েরের বিষয়ে বলা হয়েছে, অনুসন্ধান-তদন্ত কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের ঘুষ লেনদেন ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে; তদন্ত শেষ করার জন্য আইনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। দুদকের ওপর আস্থার ঘাটতি রয়েছে। বড় দুর্নীতিবাজ ধরার ক্ষেত্রে দুদকের দৃশ্যমান সাফল্য নেই।

সর্বশেষ খবর