শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঘরে বসেই বানানো হয় বিদেশি কসমেটিক্স

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘরে বসেই বানানো হয় বিদেশি কসমেটিক্স

১ ও ২. ভেজাল কেমিক্যাল মিশিয়ে এভাবেই বানানো হচ্ছে বিদেশি ক্রিম। ৩. কৌটায় লাগানো হচ্ছে বিদেশি লেবেল। ৪. টেবিলের ওপর রাখা কৌটাগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজধানীর নামিদামি শোরুমে -নিউজটোয়েন্টিফোর

ত্বককে উজ্জ্বল, আরও একটু মোহনীয় করতে যে ফেসিয়াল ক্রিম ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কতটা খাঁটি? আর যে ব্র্যান্ড ব্যবহার করছেন, তাও কি আসল, নাকি ‘মেড ইন পুরান ঢাকা’? রূপচর্চার এমন উপকরণই ক্ষতিকর রং আর মানহীন রাসায়নিক দিয়ে নামি ব্র্যান্ডের মোড়কে গোপনে তৈরি হচ্ছে পুরান ঢাকায়! নানা অভিযানের পরও বারবার অবস্থান পাল্টে এমন ভেজাল ফেসিয়াল ক্রিম, জেলসহ অসংখ্য প্রসাধনী পণ্য তৈরি করছে জালিয়াত চক্র। নিউজ টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার  ফখরুল ইসলামের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। তেমনি এক প্রসাধনী আয়ুর। প্রতিবেশী দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এটি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের প্রসাধনীর দোকানগুলোয় ঢুকলে চোখ পড়বে সেই আয়ুরের বড় মজুদ। ক্রেতারা আসল ভেবে কিনলেও দোকানির কথায় স্পষ্ট বোঝা যায় এগুলো আসল মোড়কে নকল ভার্সন। সেখানকার এক দোকানি বলেন, কসমেটিক্স বাজারের অবস্থা আগে ভালো ছিল। এখন বাজারের অবস্থা তেমন সুবিধার নয়। তাই আসল মাল বিক্রি করতে গেলে লাভ হয় সীমিত। আর ক্রেতারাও বেশি দামে আসলটা নিতে চান না।

কোথায় তৈরি হয় এসব? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া হয় কামরাঙ্গীর চরে। সেখানে অনুসন্ধান চালানো হয় সাদিয়া আয়ুর কারখানায়। কারখানার বাথরুমে তৈরির পরিবেশ যতটা না ছিল আতঙ্কের, তার চেয়ে আরও আতঙ্কের ছিল ক্রিমে মেশানো ভয়াবহ কাপড়ের রং ও কেমিক্যাল। চোখ জুড়ানো নানা রঙের সঙ্গে কেমিক্যাল হাতে মিশিয়ে বোতলজাত করছেন শ্রমিকরা। যারা রূপচর্চায় নিজের অতি গুরুত্বপূর্ণ ত্বকে যতœ নিতে নানা ধরনের ফেসিয়াল, স্কার্ব কিংবা শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, এখানে সেসবে মেশানো হয় হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড জাতীয় বিভিন্ন কেমিক্যাল। এরপর ওইসব নকল প্রসাধনীতে বিদেশি আয়ুরের মোড়কে যুক্ত করতেই তা হয়ে যায় বিশ্বস্ত আয়ুর ফেসিয়াল ও স্কার্ব।

জানতে চাইলে সেখানের এক শ্রমিক বলেন, ‘এখানে অনেক ধরনের কেমিক্যাল আছে। সাদা, কালো, নীল। নাম তো বলতে পারব না।’

একই রকম গোল্ডেন আয়ুর নাম দিয়ে প্রসাধনী তৈরি করে খিলক্ষেতের আরেক জালিয়াত চক্র। এখানে তারা তৈরি করে ফেসিয়াল, স্কার্ব, জেলসহ অন্তত ১২টি পণ্য। ক্ষতিকর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে বানানো হয় ত্বক ফরসা করার ক্রিম। এ কাজে জড়িতরাও স্বীকার করেন এগুলো তারা যেখানে বানাচ্ছেন তার পরিবেশ সেটি নয়।

একই সঙ্গে তারা বানান হারবাল শ্যাম্পুও। এটি বানানোর উপকরণ সম্পর্কে এক শ্রমিক জানান, ‘থিকনার, বেজ, পানি আর সল্ট দিয়ে বানানো হয় সেসব শ্যাম্পু।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রসাধনী নিয়ে অসাধু চক্রের এমন জালিয়াতিতে ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন ভোক্তারা। তাদের মতে, যদি নকল প্রসাধনীতে কঠিন ধাতু থাকে তাহলে স্কিন ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমন প্রসাধনী প্রতারণা থেকে ভোক্তাদের বাঁচাতে সমন্বিত অভিযান পরিচালনার দাবিও করেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর