সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ ও নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানি গ্রহণের জন্য ১৫ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন সময়সীমা পর্যন্ত আগের মতো সশরীরে উপস্থিতি ছাড়াই বিচারকাজ সম্পন্ন হবে। শুনানি হবে ভিডিও কনফারেন্সে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশে এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এদিকে হাই কোর্টে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য ১১টি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের বিষয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তার রোধকল্পে এবং শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ এবং কোর্ট কর্তৃক জারি করা প্র্যাকটিসের ডাইরেকশন অনুমোদন করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকাজ পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারপতি ১১টি বেঞ্চ গঠন করেছেন।
নিম্ন আদালতের বিষয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত তিনটি প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ১০ মের নির্দেশনা অনুসরণ করে শুনানি গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারী কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এই নির্দেশনা ১৫ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
করোনাভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে সরকারি আদেশের সঙ্গে মিল রেখে আদালত অঙ্গনও বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নানা ধরনের আইনি জটিলতা তৈরি হওয়ায় এবং বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ায় আইনজীবী সমিতিগুলোর অনুরোধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন প্রথমে কঠোর সামাজিক দূরত্ব মেনে স্বল্প পরিসরে আদালত খোলার সিদ্ধান্ত জানালেও পরে সাধারণ আইনজীবীদের দাবিতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এর মধ্যে একটি ফুলকোর্ট সভায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলেন প্রধান বিচারপতি। পরে ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানির জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পরদিন ১০ মে উচ্চ আদালতের সব বিচারপতিকে নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে ফুলকোর্ট সভা করেন প্রধান বিচারপতি। এরপর উচ্চ আদালতসহ অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরপর থেকে উচ্চ আদালতসহ সারা দেশে ভার্চুয়াল কোর্টে বিচারকাজ অব্যাহত রয়েছে।
এর মধ্যে দফায় দফায় সাধারণ ছুটিরও মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ১৬ মে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে সরকার ৩০ মের পর সাধারণ ছুটি আর বাড়াচ্ছে না। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট থেকে নতুন এ নির্দেশনা এলো।
ভিডিও কনফারেন্সে শপথ নিলেন ১৮ বিচারপতি : সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে স্থায়ী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ১৮ জন বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গতকাল বিকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা যুক্ত ছিলেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শপথ নেওয়া ১৮ বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার, বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন, বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিচারপতি ফাতেমা নজীব, বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা, বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান, বিচারপতি খিজির হায়াত, বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার, বিচারপতি মোহাম্মদ আলী, বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীম, বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খান, বিচারপতি মো. খায়রুল আলম, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি আহমেদ সোহেল, বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল ইসলাম।
এই ১৮ জন ২০১৮ সালের ৩০ মে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে গত শুক্রবার তাদের হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শুক্রবারই আইন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই নিয়োগ শপথগ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।