শনিবার, ৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

দরকষাকষিতে বড় অস্ত্র শ্রমিক ছাঁটাইয়ের হুমকি

------ জলি তালুকদার

দরকষাকষিতে বড় অস্ত্র  শ্রমিক ছাঁটাইয়ের হুমকি

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেছেন, পোশাকশিল্প মালিকরা করোনা পরিস্থিতির শুরুতেই প্রণোদনার জন্য সরকারের সঙ্গে এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় অঙ্কের দরকষাকষি শুরু করে। সেই দরকষাকষি এখনো চলছে। আর এই দরকষাকষিতে মালিকদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের হুমকি।

এই শ্রমিক নেতার দাবি, সামনের দিনে শ্রম-ঘামে রক্ত নিঙড়ানো শ্রমিকের জন্য ঘোর অন্ধকার মরণ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না। চুপি চুপি ব্যাপক চাকরিচ্যুতি চলছেই। তাহলে আরও শ্রমিক ছাঁটায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কারণ কী? গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার। তিনি বলেন, শ্রমিক ছাঁটাই তো চলছেই, মহামারী পরিস্থিতির শুরু থেকে ছাঁটাই হয়েছে। কমপক্ষে ৭০ হাজার ছাঁটাই হয়েছে। যদিও শ্রমিকদের আন্দোলনের চাপে ছাঁটাই হওয়া কাউকে কাউকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। আর মে মাসে ঈদের আগ পর্যন্ত ছাঁটাইয়ের তেমন প্রকোপ ছিল না। কিন্তু ঈদের পরেই চাকরিচ্যুতি ও মিথ্যা মামলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হয়রানি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, প্রচলিত শ্রম আইন অনেকটা শ্রমিক স্বার্থবিরোধী হলেও, কিছুটা আইনগত নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন শ্রমিকরা। ফলে চাইলেই একজন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা যায় না। শ্রমিককে তার চাকরির বয়স অনুযায়ী কিছু ক্ষতিপূরণ ও সুবিধা দিতে হয়। মালিকরা করোনাকে ছুতো হিসেবে ব্যবহার করে শ্রমিকের সে সব পাওনা পরিশোধ করা থেকে রেহাই চাচ্ছেন। মালিকরা সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করছেন। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, সরকার মালিকদের কথায় উঠবস করে, মালিকরা আবদার করলেই শ্রমিকের বেতন ও বোনাস কমিয়ে দেয়।

এই গার্মেন্ট শ্রমিক নেতার দাবি, পোশাক পণ্যের অর্ডার বাতিলের তথ্যটা মালিকদের একটা ডাহা মিথ্যা কথা। এই বৈশ্বিক শিল্পে তথ্য কিছুটা হলেও সহজে পাওয়া যায়। আমরা দেখেছি, মালিকরা করোনা পরিস্থিতির শুরুতেই অর্ডার বাতিল ও কাজ নেই, এই কথা বলে সরকারের কাছ থেকে শ্রমিকের তিন মাসের বেতন আদায় করেছেন। পরে আবার লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে কারখানা না খুলে দিলে মালিকরা পিছিয়ে পড়বেন, এমন অজুহাতে শ্রমিকদের ঝুঁকিতে ফেলে কারখনা খোলা হয়েছে। এরপরে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে না, এমন অঙ্গীকার করে এপ্রিলের বেতন ৩৫ শতাংশ এবং ঈদ বোনাস অর্ধেক কেটে রাখা হয়েছে। এখন শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করার জন্যও সরকারের সাহায্য চান মালিক নেতারা। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, সমগ্র চাকরি জীবনের সঞ্চয় তার আইনানুগ পাওনা থেকে পুরনো পোশাক শ্রমিককে নানান কৌশলে বঞ্চিত করে চাকরিচ্যুতি এবং নতুন শ্রমিক নেওয়ার কাজটা মালিকরা নিয়মিত করে থাকেন। কোথাও কোথাও কাগজপত্রে শুধু কাজে যোগদানের তারিখ বদলে দেওয়া হয়। পুরো পৃথিবীর মানুষের এত বড় বিপদের সময়ে, পোশাক মালিকরা সুযোগ বুঝে এই কুকাজ করে যাচ্ছেন, নিশ্চিন্তে এবং নির্ভয়ে। জলি তালুকদার বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই অভাবি শ্রমিকরা কাজ করছেন। কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হলে, অন্যরা ক্ষতিপূরণ পেলেও শ্রমিকরা উল্টো চাকরি হারাচ্ছেন। অভিযোগ আছে, জ্বর-সর্দির জন্য শ্রমিককে ছুটিতে পাঠিয়ে আর কাজে নেওয়া হয়নি। আক্রান্তরা চিকিৎসাও পাচ্ছেন না। সবচেয়ে বড় কথা বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের উপসর্গ লুকাতে হচ্ছে। যা আরও বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। শ্রমিকদের মধ্যে সীমাহীন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর