বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার পরেও রাজনীতি খুব একটা বদলাবে না

-ড. মীজানুর রহমান

করোনার পরেও রাজনীতি খুব একটা বদলাবে না

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা ধারণা করছিলাম, করোনার কারণে পৃথিবী একদম বলদে যাবে। নতুন একটা পৃথিবী পাব। মানুষের আচরণ, চালচলন বদলে যাবে। কিন্তু করোনার মধ্যেও রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী বা সাধারণ নাগরিকদের আচরণ যেমন আছে, আমার মনে হয় না করোনা-পরবর্তী সময়ে খুব একটা বদলে যাবে।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, রাজনীতি, অর্থনীতি এই ব্যবস্থাটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সৃষ্টি। এখানে বৈষম্য, মানুষের সমধিকারের প্রতি যে অবজ্ঞা, এটা তো কেউ না কেউ সৃষ্টি করেছে। মূলত এটা সমাজব্যবস্থাই সৃষ্টি করেছে। আর যারা সৃষ্টি করেছে, তারা নিজের স্বার্থেই সৃষ্টি করেছে। যে যেভাবে লুটপাট করে খেতে পারে। নিজের স্বার্থটা বড় করে দেখছে।

তিনি বলেন, ‘যারাই এ সংস্কৃতি চালু করেছিল, তারাই করোনার পর নতুন সংস্করণ নিয়ে আসবে। বর্তমানে যে ব্যবস্থা চলছে, এর চেয়ে ভালো কিছু হবে বলে মনে করি না। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের বা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে, বিশেষ করে আমেরিকা, চীন বা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা সংকট যখন আসত, তখন আগে প্রতিপক্ষ বা আশপাশে উসকে দিয়ে নিজেদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করত। এখনো সে ব্যবস্থা অক্ষুণœ আছে বলেই মনে হয়। মূল সংকট হচ্ছে, সারা পৃথিবীতে অল্প কয়েকজন মানুষের হাতে ক্ষমতা ও অর্থ কুক্ষিগত হচ্ছে। অর্থনীতিতেও এটা হচ্ছে, রাজনীতিতে এটা হচ্ছে।’

ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘করোনার মহামারীতে আমাদের সামনে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি চলে এসেছে, সেগুলো সমাধানের দিকে এখনই রাজনৈতিক দলগুলোকে নজর দিতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে ভঙ্গুর অবস্থা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি ব্যবস্থার কোথায় কোথায় সমস্যা ছিল, সবকিছু নতুন করে মানুষের সামনে চলে আসছে। এগুলো আগামীতে কীভাবে সমাধান করা যাবে, এখনই অনুধাবনের উপযুক্ত সময়। বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করে যেসব রাজনৈতিক দল মানুষের চাহিদা পূরণে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে থাকবে, করোনা-পরবর্তী রাজনীতিতে জনগণ তাদের দিকেই ধাবিত হবে।’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্য বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো গতানুগতিকভাবে, সমাজ এবং ভূখ- কিংবা জনবসতির যে চিন্তা-চেতনা, এটা যদি ধারণ করতে না পারে তাহলে টিকে থাকতে পারে না। করোনার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর চিরাচরিত মিছিল, মিটিং, সভা, সেমিনার, সমাবেশ, আন্দোলন-সংগ্রাম নেই। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত মানুষের চাহিদা অনুধাবন করা। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে কিছু লোক আছেন, যারা সমাজব্যবস্থা, প্রত্যশা নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করেন।’

তিনি বলেন, মানুষ ও সমাজ কোথায় যাচ্ছে, তারা এখন কী চাইছে, এখন থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো যদি তা অনুধাবন করতে পারে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবেই মঙ্গল হবে। যেমন ছয় দফা, আট দফা, ১১ দফা, ১৬ দফা, ১৯ দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। আবার নির্বাচনের সময় ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। চলমান অর্থনীতি, রাজনীতির মধ্যে মানুষের যে প্রত্যাশা আছে, করোনার কারণে যে ত্রুটিগুলো ধরা পড়ল, সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যাবে, এখন থেকেই পদক্ষেপ, কর্মসূচি নিতে হবে। যারা কর্মসূচি নিতে পারবে, তারাই এগিয়ে থাকবে। এ কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভবিষ্যতে যারা জনগণের পাশে থাকবে, তারাই এগিয়ে থাকবে মানুষের কাছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মীজানুর রহমান বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী সময়েও এর কোনো পরিবর্তন হবে বলে দেখি না। হতাশায় থাকা মানুষের মধ্যে ধর্মান্ধতা চলে এসেছে। ধর্মের সঠিক অর্থ না বুঝে ‘আচারে’ বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে কিছু লোক। আগামী দিনে এগুলোও কমবে বলে মনে হয় না। মানুষ যখন হতাশার মধ্যে থাকে, তখন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়। কাজেই ভবিষ্যতে ধর্ম একটা বিরাট জায়গা নিতে পারে।’

 

সর্বশেষ খবর