মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সাহেদের সম্পদের খোঁজে দুদক

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাত দিনেও খোঁজ মেলেনি কভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে মহাজালিয়াতির অন্যতম হোতা রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদের। প্রতারণার জাদুকর সাহেদ বিদেশ যাননি, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও কেন গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না? এমন প্রশ্ন এখন অনেকেরই মুখে মুখে। তবে গতকাল সাহেদকে গ্রেফতার করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে, সাহেদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া, করোনা টেস্ট নিয়ে নানা ধরনের প্রতারণায় সাহেদের বিরুদ্ধে এবার চট্টগ্রামেও প্রতারণার মামলা হয়েছে। মো. সাইফুদ্দিন নামের এক ব্যক্তি গতকাল সোমবার ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উত্তরা রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান হতে পারে এমন খবর আগেই পেয়ে যান সাহেদ। রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের দিনও তাকে ধরার ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কচ্ছপগতিই কাল হয়ে দাঁড়ায়। সটকে পড়ার সুযোগ পান সাহেদ। তবে র?্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গতকালও দাবি করেন, সাহেদকে গ্রেফতার করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই আপনাদের জানাতে পারব। আমাদের অনেক টিম মাঠে কাজ করছে। 

সাহেদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক : চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পলাতক রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার কমিশনের এক সভায় সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অনুসন্ধান টিমের অপর দুই সদস্য হলেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মো. গোলাম মাওলা।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, রিজেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুদক সূত্র মতে, অনুসন্ধান শুরুর আগে কমিশনের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি, গণমাধ্যম, ভার্চুয়াল মাধ্যমসহ বিভিন্ন উৎস থেকে মো. সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সংগ্রহ করেছে। দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল এসব তথ্য-উপাত্ত সংবলিত অভিযোগ কমিশনে উপস্থাপন করলে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মাধ্যমে এই অভিযোগের অনুসন্ধান করা হবে।

চট্টগ্রামেও সাহেদের প্রতারণা : ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ বলেছেন, রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের নামে প্রতারণার মাধ্যমে ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ডবলমুরিং থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমসহ আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

মামলা সূত্রে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রামেও গাড়ির টায়ার ও যন্ত্রাংশ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মেগা মোটর্সের মালিক জিয়া উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের পক্ষে সাইফুদ্দিন নামের এক ব্যক্তি মামলা করেন। এতে সাহেদ করিম ছাড়াও শহীদুল্লাহ (৬০) নামে আরও একজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় জিয়া উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরও জানা গেছে, ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামের বন্দর, স্বাস্থ্য বিভাগ, রেলওয়ে, গণপূর্ত অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, শিক্ষা প্রকৌশল, এলজিআরডি, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারে কোনো ধরনের নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসাসহ নানা কৌশলে সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দা সংস্থা।

সাহেদকে গ্রেফতারের নির্দেশ : প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের পৃথক দুই মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মইনুল ইসলাম এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিকে গ্রেফতার করা গেল কিনা, সে বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আগামী ১৩ আগস্টের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এর আগে আদালতে বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাসুদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও ৩/৮, পশ্চিম তেজতুরী বাজার গার্ডেন রোড এলাকার মৃত মাওলানা আবদুস জোবাহানের ছেলে মো সাইফুল্লাহ মাসুদ। মামলা দুটিতে একমাত্র আসামি মো. সাহেদ করিমের স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সাতক্ষীরার নিউমার্কেটের কামালনগর এলাকা এবং বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টর ১৪ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাড়ি। প্রসঙ্গত রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং প্রতারণার অভিযোগে ৬ জুলাই র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একটি দল উত্তরায় হাসপাতালের একটি শাখায় অভিযান চালায়। সেখানে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পায় র‌্যাব।

পরে অনিয়মের অভিযোগে রিজেন্টের দুটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেয় র‌্যাব। এ ঘটনায় র‌্যাবের মামলায় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার হলেও সাহেদ এখনো পলাতক। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর