প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ সম্প্রসারণে মনোযোগ বাড়িয়েছে ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় যোগাযোগ বাড়াতে আটটি রুট চিহ্নিত করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে চিহ্নিত আটটি রুট হলো, চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা (ত্রিপুরা), চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর থেকে তামাবিল হয়ে ডাউকি (মেঘালয়), চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর থেকে শেওলা হয়ে সুতারকান্দি (আসাম) এবং চট্টগ্রাম/মোংলা বন্দর থেকে বিবির বাজার হয়ে শ্রীমন্তপুর (ত্রিপুরা) এবং তার বিপরীত।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত বছর দুই দেশ ভারত থেকে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল থেকে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপিএস) চূড়ান্ত করে। এই চুক্তিটি নৌ, রেল, সড়ক বা বহুমুখী পরিবহনের মাধ্যমে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেয়। এর মধ্যে গত মাসেই চট্টগ্রাম নৌবন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতা থেকে পণ্যবাহী
জাহাজযোগে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। ভারত সরকার আশা করে, এই পরীক্ষামূলক জাহাজ চলাচলের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্য যোগাযোগ উন্নত হবে। উভয় পক্ষই মনে করছে, আকাশ, নৌ, রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে পারস্পরিক কল্যাণের স্বার্থে দুই দেশের মধ্যেই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। ভারতীয় এক কর্মকর্তা বলেন, ভারত সরকার বুঝতে পেরেছে যে, বর্তমানে দুই দেশের সরকারের মধ্যে থাকা সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকলেও এ সম্পর্ক আরও উন্নত করতে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ একই সময়ে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সংযোগ বাড়াতে অনেক বেশি মনোযোগী। বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যকে ১ জুলাই থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে দিয়ে চীন বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে সচেষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং কভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করার এক মাসের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। এমন সময় ভারতের সঙ্গে পরীক্ষামূলক পরিবহন কার্যক্রম উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দুই দেশের জন্য সমান লাভজনক প্রস্তাব : ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ছিল সংযোগ বা কানেক্টিভিটি সম্প্রসারণ। সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কলকাতা থেকে আগরতলার উদ্দেশে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে কনটেইনার জাহাজের প্রথম চলাচল এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে উভয় পক্ষই ভারত থেকে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল থেকে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস স্বাক্ষর করে যা দুই দেশের অর্থনীতির জন্যই সমান লাভজনক হতে পারে। এর আগে ২০১৫ সালে দুই দেশই উপকূলীয় নৌ পরিবহনের বিষয়ে একটি চুক্তি এবং ২০১৮ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতে পণ্য পরিবহনের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তি এবং এসওপিগুলো নৌ, রেল, সড়ক বা বহুমুখী পরিবহনের মাধ্যমে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেয়। চুক্তির আওতায় যে আটটি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে তা বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে, ভারত থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য দূরত্ব, সময় এবং কারিগরি ব্যয় হ্রাস পাবে এবং উভয় অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। বাংলাদেশের পক্ষে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগ জোরদার করা, সরবরাহ শৃঙ্খলের সমন্বয়, অর্থ, পরিবহন, বীমা ইত্যাদি ব্যবসায়িক পরিষেবার প্রচার এবং রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।