বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নাজমা সমর্থকদের বিক্ষোভ আওয়ামী লীগ অফিসে

বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন পেতে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ৫৬ জন। এর মধ্যে ছিলেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতারও। গত রবিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় ৫টি শূন্য আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এতে ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান। গতকাল পত্রিকায় এই সংবাদ দেখে যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভিড় করেন। এ সময় তারা ‘টাকা খাওয়া দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হাবিব হাসানের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘নাজমা আপার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেন।

জানা গেছে, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন ৯০ দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তফসিল হতে আরও দেরি। এ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসানকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে ক্ষুব্ধ হন এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার ও তার অনুসারীরা।  গতকাল শতাধিক নেতা-কর্মীকে নিয়ে দলের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী নাজমা আকতার। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেখানে গেলে যুব মহিলা লীগের কয়েকজন নেত্রী তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরপর থেকে কয়েকশ নেতা-কর্মী নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন নাজমা আকতার। এ সময় তারা স্লোগান দেন ‘টাকা খাওয়া দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘হাবিব হাসানের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘নাজমা আপার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’। এরপর থেকে বেশকিছু সময় কয়েকশ নেতা-কর্মী নিয়ে সেখানেই অবস্থান শুরু করেন নাজমা। ওবায়দুল কাদের চলে যাওয়ার পরও স্লোগান ও অবস্থান অব্যাহত রাখেন নাজমা আকতারসহ যুব মহিলা লীগের নেতৃবৃন্দ। বিকালে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আসেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলতে যান নাজমা আকতার। এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, দলীয়ভাবে এখনো মনোনয়নের খবর ঘোষণা করা হয়নি। এরপর বিক্ষোভ-কর্মসূচি বন্ধ করে চলে যান নাজমা আকতার ও তার কর্মী, সমর্থকরা। বিক্ষোভ ও পার্টি অফিসে অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজমা আকতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি পত্রিকার সংবাদ দেখে গতকাল সকালে যুব মহিলা লীগের মেয়েরা আমাকে ফোন করেন। কেউ কেউ কান্নাকাটি করেন। তখন আমি তাদেরকে বলি আমি কী করতে পারি? মেয়েরা জানান, কাদের ভাই (ওবায়দুল কাদের-দলের সাধারণ সম্পাদক) এখন পার্টি অফিসে আসবেন। আপনি ওখানে চলে আসেন। তখন থেকেই মেয়েরা পার্টি অফিসে (দলীয় সভানেত্রীর অফিস) অবস্থান নেন। তিনি বলেন, আমি কাদের ভাইকে পাইনি। মেয়েদেরকে জানিয়েছেন পত্রিকায় যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তার কোনো সত্যতা নেই। অভিযোগের সুরে নাজমা আকতার বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের ভাই দীর্ঘ দুই মাস আমার টেলিফোন ধরেন না। এসএমএস করলেও কোনো সাড়া পাইনি। আমি দীর্ঘ ৪০ বছর রাজনীতি করি। আমি নিবেদিত দলের কর্মী, জেল খেটেছি, বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতন সহ্য করেছি। পার্টির সাধারণ সম্পাদক আমার ফোন কেন ধরবেন না-এটা জানতে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করিনি, কারণ আগস্ট মাসে নেত্রীর মন খারাপ থাকে। তাই পার্টির দ্বিতীয় ব্যক্তি (সাধারণ সম্পাদক)-কে আমি টেলিফোন করি, কথা বলতে চাই। তিনি আমার ফোন ধরেন না। এমনকি আমার সামনে দিয়ে অন্য প্রার্থীরা কাদের ভাইয়ের ড্রইংরুমে যায়, আমি যেতে পারি না। কারণ কী? ভেবেছিলাম মনোনয়ন বোর্ডে আমার কথা দলের নেতারা বলবেন, কিন্তু কেউই বলেননি বরং পার্টির সাধারণ সম্পাদকসহ আরেকজন নেতা আমার বিরোধিতা করেছেন। ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়নে যার নাম শোনা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে একটি পক্ষ লিফলেট বিতরণ করেছে। সেটাও পার্টি অফিসে চলে গেছে। তারা তিন ভাই তিন দল করে। ওই পরিবার থেকে সে একাই আওয়ামী লীগ করে। যুব মহিলা লীগের সভাপতি আরও বলেন, দলীয় সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা আমরা সবাই মেনে নেব, কিন্তু সেটা যদি আমার চেয়ে যোগ্য কেউ পায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পরিবারের কেউ যদি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায়, তাহলে প্রতিবাদ করতেই হবে। প্রয়োজনে ৪০ বছরের রাজনীতি বিসর্জন দিতে হলে দেব।’ 

অন্য চার আসনে মনোনয়ন পেলেন যারা :  সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনবারের জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস। নওগাঁ-৬ আসনের প্রয়াত এমপি ইস্রাফিল আলমের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলালকে। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে প্রকৌশলী তানভির শাকিল জয়কে। ঢাকা-৫ আসনে তিন প্রার্থীর নাম নিয়ে আলোচনা হলেও কাউকে চূড়ান্ত করা হয়নি। এ তিন প্রার্থী হলেন প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে মশিউর রহমান সজল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল হক মনু। শুধু পাবনা-৪ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বাধা থাকায় অন্য প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রার্র্থীর নামগুলো নিশ্চিত জানা গেছে। তাদেরকে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করতে দলের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকা-৫ আসনে প্রার্থী নাম আলোচনা করতে গিয়ে প্রয়াত হাবিবুর রহমানের স্মৃতি স্মরণ করে আবেগাআপ্লুত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর